গর্ভধারণে বিলম্বিত? কোন ভুল করছেন না তো?

মা হওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন? গর্ভধারণের চেষ্টা করেও সফল হচ্ছেন না অনেক নারী। সন্তান ধারণের সক্ষমতা বাড়াতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি। কিন্তু গর্ভধারণে বাধাঁর সম্মুখীন হচ্ছেন বা গর্ভধারণে বিলম্বিত??
সব সমস্যার সমাধান ডঃ এর কাছে এমনটি ভাবার আগে বের করুন আপনি নিজের বাধাঁর কারণ নয়তো? নির্দিষ্ট কিছু টিপস রয়েছে জননক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ও আপনার ইউটেরাসের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে।

. অনিয়ন্ত্রিত জীবন

অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন আপনার মা হওয়া কে বিলম্বিত করছে। সেটি আপনি এবং আপনার সংগী দুইজনের ই হতে পারে। দুইজন ই হয়তো নিয়ম বহির্ভূত অস্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত।।গর্ভধারণ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কিছু অভ্যাস মেনে চললে গর্ভধারণের জটিলতা অনেকটাই কমে আসতে পারে।

২. খ্যদ্যভ্যাস

জাংক ফুড, অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেড গ্রহন,তৈলাক্ত খাদ্যগ্রহন,সময়মত খাদ্য গ্রহন না করা বা অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য আসক্ত হওয়া মা-বাবা হওয়ার পথ কে বিলম্বিত করে। নির্দিষ্ট কিছু টিপস রয়েছে জননক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ও আপনার ইউটেরাসের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে। যেসব নারী গর্ভধারণের চেষ্টায় আছেন তাদের ভিটামিন , ফলিক অ্যাসিড খাওয়া শুরু করাটা ভালো। গর্ভধারণের জন্য একজন নারীর দেহে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানে সুষম অবস্থা বজায় গর্ভধারণে সহায়তা করে।

. ঋতুচক্রের হিসেবে সহবাস না করা

অনেক দম্পতি জানেন না ক্যালেন্ডার হিসেবে সহবাস করা যায়। ঋতুচক্র যাদের ২৮-৩০ দিনের সার্কেল তারা মাসিকের ১০ তম দিন থেকে ২০তম দিন সহবাস করবেন। এর বাইরে যে করলে কনসিভ হবে না তা নয়। এই দিনগুলিতে কনসিভের হার চূড়ান্ত গবেষণাতে দেখা গিয়েছে। ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ড. ম্যারি অ্যালেন পাভোন বলছেন, ‘সাধারণত পিরিয়ডের দুই সপ্তাহ আগে একজন নারীর ওভুলেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
অবশ্য যাদের ক্ষেত্রে ঋতুচক্র ব্যাহত হয়, তাদের ওভুলেশনের সময় নির্ণয় করা বেশ কঠিন।
তবে সাধারণত পরবর্তী পিরিয়ডের আগের ১২ থেকে ১৬ দিন আগে এটি ঘটতে পারে।’

. সহবাস এর নিয়ম

অনেক দম্পতিই জানেন না কন্সিভ এর জন্যই প্রতিদিন এর চেয়ে একদিন পর একদিন সহবাস করা অধিক উত্তম। কারন শুক্রানু ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। ওভুলেশন প্রেডিকশন কিটের সাহায্যে নারীর কখন ওভুলেশন হচ্ছে, সেটা জানা যায়। ওভুলেশন লক্ষণগুলি জানা থাকলে গর্ভধারণ করার ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধে হতে পারে মহিলাদের।
কারণ একজন মহিলা মা হতে চাইলে তাঁকে নিজের ওভুলেশন সার্কেলের দিকে নজর রাখতে হবে। 

৫. মানসিক চাপ ও হতাশা

স্বামী স্ত্রী নানা ধরনের দুশ্চিন্তা মধ্যে থাকেন। কোন বিষয় নিয়ে মানসিক চাপে আছেন বা হতাশাগ্রস্থ।গর্ভধারণের চেষ্টা করেও সফল হচ্ছেন না ,এ সময়ে মানসিক চাপ একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এর প্রভাব কিন্তু পড়বে গর্ভধারণে। যদি ও চাইলেই চাপমুক্ত থাকা যায় না তারপর ও যতটা পারবেন চাপমুক্ত থাকতে হবে।   অতিরিক্ত মানসিক চাপ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে, যা দুজনের জন্যই সমস্যা সৃষ্টি করে। মানসিক চাপ আপনার সুস্থতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

 .বয়সের দিকে লক্ষ্য রাখা

যেহেতু  বাচ্চা একজন মা বহন করে থাকেন সেহেতু মা এর উচিত তার বয়সের দিকে লক্ষ্য রাখা। মা এর বয়স ১৮ এর কম আর ৩০ এর বেশি না হওয়াই উত্তম। তাও কোন মা এর বয়স ৩০ এর বেশি হলে অবশ্যই ডঃ এর পরামর্শ নিতে হবে। ত্রিশের পর গর্ভধারণে দেখা দিতে পারে জটিলতা। নারীরা বয়স বাড়ার ফলে যে সমস্যা সবচেয়ে বেশি ভুগেন গর্ভধারণে জটিলতা। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নারীর সন্তান জন্মদান ক্ষমতা বা উর্বরতা কমতে থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাণু ও মান কমে যাওয়াই এর মূল কারণ। ইউটেরিন ফাইব্রয়েডস, ফেলোপিয়ান টিউবে ব্লক ও এন্ডোমেট্রিওসিসের মতো অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের কারণে উর্বরতা কমে যেতে পারে।

ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ড. ম্যারি অ্যালেন পাভোন বলেন, ‘৩০ বছরের পর নারীদের জন্মদান ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ৩৭ বছরের পর তা আরও কমে যায় এবং ৪০ এর পর তা অনেকখানি হ্রাস পায়।‘

. স্বামী স্ত্রীর মাঝে সুসম্পর্ক  

গর্ভধারণ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য স্বামী স্ত্রীর সচেতন হওয়া উচিত। অবশ্যই স্বামী স্ত্রীর মাঝের সম্পর্ক ভাল হতে হবে৷ কেননা এর প্রভাব আপনার বাচ্চা নেয়ার পথকে সুগম করে। পাভোনের মতে, মাসজুড়ে নিয়মিত যৌন মিলনে অংশ নিলেই বরং গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি বৃদ্ধি পায়। । ওভুলেশনের সময় মহিলাদের শরীর মিলিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে। 

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) একটি হরমোনজনিত সমস্যা। গর্ভধারণে বিলম্ব ওয়ার অন্যতম কারণ এটি। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম, ওভারিতে সিস্ট বা টিউমার থাকলে ওভুলেশন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। পিসিওএস চিহ্নিত করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা নেই,তবে পিরিয়ড না হওয়া অথবা অনিয়মিত হওয়া,ডিম্বাশয়ে একাধিক সিস্ট হওয়া পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম ওয়ার অন্যতম কারণ।

অনেক দম্পতি বাচ্চা চাচ্ছে না গর্ভধারণে বিলম্বিত করছে, তাও হচ্ছে আর আপনি চাচ্ছেন তাও হচ্ছে না, এইসব ভাবা যাবে না।। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।। প্রার্থনা করুন। হতাশ না হয়ে কিছুটা ভাগ্যর উপর ছেড়ে দিন।      

Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

আরও পড়ুন:
গর্ভকালীন ডায়বেটিস এ মা এর করণীয়
করোনার ঝুঁকি এড়াতে মা,গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের জন্য করনীয়

মোবাইল স্ক্রিনিং বা গেজেট আসক্তিতে বাচ্চাদের কিভাবে সামলাবেন?
আবহাওয়া অনুযায়ী শিশুর পোশাক
শিশুরা কেন সব কিছু মুখে দেয় ? সতর্কতা ও করনীয়

সম্পর্কিতপোস্ট

সম্পর্কিত পোস্ট

মন্তব্য করুন বা প্রশ্ন করুন ?

অনুসরণ করুন

error: Content is protected !!