গর্ভাবস্থার ৮ম সপ্তাহ । সপ্তাহ অনুযায়ী

গর্ভাবস্থার ৮ম সপ্তাহ

সপ্তাহভেদে গর্ভাবস্থা বা গর্ভাবস্থার প্রতিটি সপ্তাহ সম্পর্কে Pawkythings.com এর আয়োজন। গর্ভাবস্থার ৮ম সপ্তাহ এ মা এর শারীরিক অবস্থা, শিশুর বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করা হবে।


৮ম সপ্তাহে ভ্রূন এর অবস্থা ও উন্নতিঃ

প্রতি সপ্তাহে ভ্রুনের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হচ্ছে। এ সপ্তাহে আপনার শিশুর সাইজ রাসবেরি বা কিডনি বিনের মত। পূর্বের সপ্তাহে শিশুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংঙ্গ গঠন হয়ে গিয়েছ।

  • এ সপ্তাহে ধীরে ধীরে ভ্রূনের ব্যাংগাচির মত লেজটি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে এবং মানব শিশুর আকৃতি ধারন করছে।
  • এখন শিশুর মাথাটি সারা শরীর এর ন্যায় বড়। পুরো শরীর বুকের উপর কাছে কুন্ডলি পাকিয়ে আছে।
  • ভ্রূন এর হাত এবং পা বড় হতে শুরু করেছে। আংগুল, হাটুঁ, গোড়ালি এখনও গড়ে উঠে নি, ধীরে ধীরে বিকশিত হবে। হাত ও হাতের আংগুলের তুলনায় পা ও পায়ের আংগুল কমপক্ষে ৫-৭ দিন দেরিতে বিকশিত হয় 
  • মস্তিষ্কের কোষের গঠন সপ্তম সপ্তাহের মত এ সপ্তাহে দ্রুত চলছে। মস্তিষ্কের ঘ্রান নেয়ার স্নায়ু ও বেশ ভালভাবে গড়ে উঠছে।
  • ভ্রূন এর নাক ও উপরের চোয়াল লক্ষনীয়ভাবে দেখা যাবে।
  • চোখের উপরের অংশ ভালভাবে বিকশিত হচ্ছে।
  • কান এর বাইরের অংশের গঠন ও দেখা যাবে কেননা ভিতরের অংশের গঠন হয়ে গিয়েছে।

 

গর্ভাবস্থার ৮ম  সপ্তাহ এ মায়ের লক্ষনঃ

সপ্তাহ অনুযায়ী গর্ভাবস্থার একেক ধাপ একেক রকম।। গর্ভাবস্থার ৮ম  সপ্তাহ এ মা শরীর এর কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে দেওয়া হলঃ

  • বমি ও ক্লান্ত ভাবঃ গর্ভাবস্থায় বমি ও ক্লান্ত ভাব মায়ের জন্য খুব স্বাভাবিক।। ৯ মাস জুড়ে এই সমস্যা থাকতে পারে। তবে সবার ক্ষেত্রে এক নয়।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যঃ ৮ম সপ্তাহে গর্ভাবতী মা এর কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়ের কিছু সাধারণ সমস্যার মাঝে কোষ্ঠকাঠিন্য অন্যতম। এক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে করনীয়  এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখবেন।
  • স্তনের পরিবর্তনঃ গর্ভাবস্থার শুরু থেকে মায়ের স্তনের পরিবর্তন হতে থাকে। ৮ম সপ্তাহে মা খেয়াল করে থাকবেন মায়ের স্তনের পরিবর্তন এসে থাকবে । এসময় স্তন পূর্বের অবস্থা থেকে বড় হতে শুরু করে কেননা দুধ উৎপাদনকারি টিস্যুগুলো ক্রমশ দুধ উৎপাদনের শুরু করেছে। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্ট্ররন হরমোনের প্রভাবে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যাওয়ায় কয়েকদিনের মাঝে স্তনের কালো অংশ যেটি এরিওলা নামে পরিচিত সেটি বড় হতে শুরু করে। 
  • ক্রাম্পিং বা পেটে খিঁচ দেওয়াঃ গর্ভাবস্থা কিছু শারীরিক সমস্যার মাঝে এটি অন্যতম। গর্ভাবস্থার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এটি ঘটা অসম্ভব কিছু নয়।
  • অতিরিক্ত গরম লাগাঃ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত গরম লাগা খুব স্বাভাবিক। গর্ভাবস্থার ৮ম সপ্তাহ এ মায়ের অস্বস্তি বোধ বাড়তে থাকে। যেহেতু ভ্রূন এর বৃদ্ধি হচ্ছে মা এর শরীরে ক্লান্ত বোধ হয় এবং গরম লাগে।
  • বার বার প্রস্রাব এর বেগঃ গর্ভাবস্থার লক্ষনগুলোর মাঝে অন্যতম হলো বারবার প্রস্রাবের বেগ পাওয়া। এই অবস্থায় মায়ের গর্ভাশয় এ চাপ পড়ে ফলে মায়ের অধিক প্রস্রাবের বেগ আসে।


৮ম সপ্তাহে মা কি করবেনঃ

গর্ভাবস্থা মা এর জন্য খুব স্পর্শকাতর বিষয়। এক্ষেত্রে মাকে খুব সচেতন থাকতে হবে।

  • ক্লান্ত ভাব দূর করতে বিশ্রাম নিন
  • ডি হাইড্রাইড থাকতে প্রচুর পানি পান করুন।
  • দুশ্চিন্তা বা অস্থিরতা দূরীকরণের চেস্টা করা। রিলাক্সেজন থেরাপি নিতে পারেন
  • একসাথে না খেয়ে বার বার অল্প পরিমান খাওয়া
  • হালকা ব্যায়াম বা ইয়োগা করা
  • ডঃ এর পরামর্শ ব্যতীত কোন ওষুধ সেবন করা যাবে না
  • পেটে চাপ যেন না পড়ে সেদিকে সজাগ দৃস্টি রাখা
  • দাতঁ এর যত্ন নিবেন। 


৮ম সপ্তাহে কি এড়িয়ে চলবেনঃ

  • স্ট্রেস নিবেন না। পরিবার এর সবাই আপনাকে না বুঝলে নিজের জন্য নিজেকে ব্যস্ত রাখুন যেন আপনার ও অনাগত শিশুর উপর এর প্রভাব না পড়ে।
  • এলকোহল ও ধূমপান করা যাবে না।
  • ক্যাফেইন না খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাও দিনে ২ কাপ কফি বা চা খেতে পারেন। এর বেশি মোটেই নয়।
  • জাংক ফুড এড়িয়ে চলুন।
  • একটানা দাঁড়িয়ে, শুয়ে বা বসে থাকবেন না। এতে মায়ের শরীরে চাপ পড়বে।
  • টক্সিক বা বিষাক্ত পরিবেশ এড়িয়ে চলুন।
  • অনেক সময় ধরে কাজ করবেন না

 

৮ম সপ্তাহে মায়ের ডায়েটঃ

৮ম সপ্তাহে মায়ের উচিত কিছু ডায়েট অনুসরণ করা। কেননা অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যভ্যাস মায়ের গর্ভকালীন ডায়বেটিস এর কারন হতে পারে। ডায়াবেটিস থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য নিচের ডায়েট চার্ট অনুসরণ করুনঃ
১.
উচ্চ ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত যেন কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেন।
২. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।

  • মাছ
  • মাংস
  • ডিম
  • ডাল এ প্রোটিন রয়েছে

৩. ক্যালসিয়াম এর চাহিদা পূরন করতে দুধ, টক দই, চীজ খাওয়া উচিত।
৪. জিংক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত যা মা ও শিশুর জন্য ভাল। টার্কি, বাদাম, দই, গরুর মাংস, সিরিয়াল জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।
৫. ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
৬.
চিনি জাতীয় খাবার এডিয়ে চলা উচিত

৮ম সপ্তাহে ডঃ এর সাথে সাক্ষাৎ বা করনীয় তালিকাঃ

আপনি ৬ সপ্তাহে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছেন যে আপনি গর্ভবতী। পূর্বে যদি ডঃ এর কাছে না গিয়ে থাকেন তবে এই সপ্তাহে মা ও বাবা একত্রে যাবেন।

  • চিকিৎসক আপনার মাসিকের/ পিরিয়ডের এর তারিখ অনুসারে আপনার ডিউ ডেট বা প্রসবের তারিখ হিসেব করে দিবেন।
  • আপনার ও আপনার স্বামীর শারিরীক সমস্যা ও পারিবারিক হিস্ট্রি / তথ্য নিয়ে চিকিৎসক আপনাকে দিকনির্দেশনা দিবেন।
  • ক্রনিক রোগ, থায়রয়েড, ডায়বেটিস, বংশগত, জিনগত, জন্মগতত্রুটি আছে কিনা তা পরিক্ষা করবেন।
  • আপনার ওজন, রক্তচাপ, উচ্চতা এবং সমসাময়িক ওষুধের তালিকা জেনে আপনার জন্য নির্দেশনা দিবেন। 
  • মূত্র পরিক্ষা, কিছু রক্ত পরিক্ষা, প্যাপ টেস্ট করে নিতে হবে এই সপ্তাহে। আর মা যদি কোন পেট ব্যাথা অনুভব করেন তবে আল্ট্রাসাউন্ড করতে হতে পারে নইলে ১০-১২ সপ্তাহে ডঃ আপনাকে আল্ট্রাসাউন্ড দিবেন।


সতর্কতাঃ

এই সপ্তাহে মায়ের পোশাক হওয়া উচিত ঢিলেঢালা। হিল জুতা পরিধান করা উচিত নয়। বর্ধিত ব্রেস্ট এর জন্য এক বা দুই সাইজ বড় ব্রা পরিধান করুন। গরম কাপড় পরবেন না। হাসি খুশি থাকুন। মন খারাপ করবেন না। সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। কোন অসুবিধা বোধ করলে অবশ্যই সাথে সাথে চিকিৎসক এর শরনাপন্ন হন।

গর্ভাবস্থার প্রতিটি সপ্তাহ সম্পর্কে ধারনা দেয়ার চেষ্টা করছি আমরা। ভাল লাগলে অন্য শেয়ার ও কমেন্ট করবেন।

আরও পড়ুনঃ
গর্ভাবতী মা এর অধিক গরম লাগার কারন ও করনীয়
গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মা এর রোজায় করনীয়
গর্ভধারণে বিলম্বিত? কোন ভুল করছেন না তো?
গর্ভকালীন ডায়বেটিস এ মা এর করণীয়
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে করনীয়
নবজাতক এর কিছু সাধারন সমস্যা
আবহাওয়া অনুযায়ী শিশুর পোশাক
শিশুর কৃমি থেকে কিভাবে মুক্তি পাবেন?

 

সম্পর্কিতপোস্ট

সম্পর্কিত পোস্ট

মন্তব্য করুন বা প্রশ্ন করুন ?

অনুসরণ করুন

error: Content is protected !!