গর্ভাবস্থার ৯ম সপ্তাহ । সপ্তাহ অনুযায়ী

গর্ভাবস্থার নবম সপ্তাহ

সপ্তাহ অনুযায়ী গর্ভাবস্থার আজকের আর্টিকেলে থাকছে

• ভ্রুন এর অবস্থা ও বৃদ্ধি

• গর্ভাবস্থার ৯ম সপ্তাহে মায়ের শারিরীক অবস্থা

• ৯ম সপ্তাহে মা কি করবেন

• গর্ভাবস্থায় কি এড়িয়ে চলবেন

• ৯ম সপ্তাহে মায়ের ডায়েট

• সতর্কতা

• বাবার জন্য টিপস

সপ্তাহ অনুযায়ী গর্ভাবস্থা বা গর্ভাবস্থার প্রতিটি সপ্তাহ সম্পর্কে Pawkythings.com এর আয়োজন। আজকে নবম সপ্তাহ নিয়ে আমরা আলোচনা করব।

নবম সপ্তাহে শিশু দেখতে কেমনঃ

নবম সপ্তাহে আপনার শিশুর সাইজ একটি চেরি কিংবা আংগুর এর মত।

কত ট্রাইমেস্টারঃ

নবম সপ্তাহ মানে এখনো প্রথম ট্রাইমিস্টার এ আছেন মা।

কত মাসঃ 

গর্ভাবস্থার নবম সপ্তাহ অর্থাৎ আপনি এখন ৩ মাসে প্রবেশ করেছেন। আপনার শিশুকে কোলে নিতে আর মাত্র ৬ মাস বাকি।

ভ্রুনের বৃদ্ধি ও অবস্থাঃ

গর্ভাবস্থার নবম সপ্তাহে ভ্রুনের বৃদ্ধি সুগঠিত ভাবে হচ্ছে। এই সপ্তাহে কি হচ্ছে আসুন জেনে নেই-

গর্ভাবস্থার নবম সপ্তাহে শিশুর মুখের গঠন ধীরে ধীরে আরও সুগঠিত হচ্ছে।

এই সপ্তাহের এসে এমব্রায়োনিক টেইল অর্থাৎ ব্যাংগাচির মত লেজটি পুরোপুরি চলে যাবে।

শিশুর চোখের আইলিড, কান, নাক ধীরে ধীরে আরব পরিপক্ক হচ্ছে

হৃদপিন্ডের চারটি প্রকোষ্ঠ গঠন হয়েছে, তা আরও পরিপূর্ণ হচ্ছে।

ফুসফুস, যকৃত, কিডনি বা অঅভ্যন্তরীণ অর্গান আরও পরিনত হবে দীর্ঘ ৯ মাসে।

শিশুর হাত, পা ও কাধঁ এর গঠন হয়ে যাচ্ছে। তবে আংগুল গুলো এখনো বিকশিত হয় নি।

এই সপ্তাহে অনেক মা আল্ট্রাসাউন্ড এ শিশুর হার্টবিট পেয়ে থাকেন। যারা পান না তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসক ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন।

গর্ভাবস্থার ৯ম সপ্তাহে মায়ের শারিরীক অবস্থাঃ

গর্ভাবস্থা একটি দোদুল্যমান পরিস্থিতি। গর্ভাবস্থার ৯ম সপ্তাহে মায়ের শারিরীক অবস্থা আগের সপ্তাহ গুলোর ন্যায় পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে আশা করা যায় যে ১২ সপ্তাহের পর হয়তো মা অনেকটা ভাল অনুভব করবেন। নিচের লক্ষণগুলো এসময় আরও তীব্রভাবে দেখা দেয়:

মুড সুইংঃ

সপ্তাহ অনুযায়ী ৯ম সপ্তাহে নিয়ে আপনার যা জানা প্রয়োজন তার মাঝে মুড সুইং অন্যতম। গর্ভাবস্থা এবং প্রসব পরবর্তী সময়ে মা এই মুড সুইং ব্যাপারটি ফেস করবেন এবং এর পর ধীরে ধীরে মুড সুইং ব্যাপারটি মা অতিক্রম করে ফেলতে পারবেন। মুড সুইং ব্যাপারটির কারনে মা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। ক্ষনে ক্ষনে ভাল লাগা খারাপ লাগা পরিবর্তন হবে। তবে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। গর্ভাবস্থার এই সময়টা অনেকের জন্য বেশ কঠিন বা অস্বস্তিকর হতে পারে। তবে পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে আস্তে আস্তে গর্ভবতী মায়েরা এই অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে থাকেন।

কোষ্ঠকাঠিন্যঃ

গর্ভাবস্থার ৯ম গর্ভাবস্থায় সপ্তাহে কোষ্ঠকাঠিন্য এর সম্মুখীন হতে পারেন। এই সময়ে মায়ের শরীরে বিভিন্ন হরমোন এর তারতম্যের কারনে মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। আবার জরায়ু সম্প্রসারণ কিংবা কম ফাইবারযুক্ত খাদ্যাভ্যাস এর কারনে মা এর এই শারিরীক সমস্যা হতে পারে।

স্তনের পরিবর্তনঃ

গর্ভাবস্থায় মায়ের স্তনের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। গর্ভাবস্থার লক্ষন থেকে শুরু করে পুরো গর্ভাবস্থায় মা এই স্তনের পরিবর্তিত অবস্থার মধ্য দিয়ে যান। স্তনে হালকা ব্যথা বা চাপ দিলে ব্যথা অনুভব করা, মায়ের স্তন ভারি অনুভূত হয়। মা এই সময়ে সুবিধার জন্য স্পোর্টস ব্রা বা বড় সাইজের ব্রা পড়তে পারেন।

বুকজ্বলাঃ

বুক জ্বলা গর্ভবতী মায়ের একটি সাধারণ সমস্যা। প্রোজেস্টেরন হরমোনের জন্য এমনটা হয়ে থাকে। এ সময় মায়ের খাবার হজমের সমস্যা হয়ে থাকে, তাই বুক জ্বলা সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাই মা অল্প অল্প করে বার বার খেতে পারেন। চাইলে গ্যাস এর মেডিসিন গ্রহন করতে পারেন।

ক্লান্তি বা অবসাদগ্রস্তঃ

সপ্তাহ অনুযায়ী গর্ভাবস্থার নবম সপ্তাহে মা ক্লান্ত বা অবসাদগ্রস্ত অনুভব করতে পারেন। এজন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিবেন। এছাড়াও শক্তি বর্ধক খাবার খাবেন। স্যুপ, প্রোটিন খাবেন।

• প্রস্রাবের আধিক্যঃ

গর্ভাবস্থায় মায়ের মায়ের ইউরিনারি ইনফেকশন হতে পারে। যা Urinary tract infection (UTI) নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে অধিক জলীয় খাবার, পানি পানি করবেন। হাইড্রাইড থাকার চেষ্টা করবেন। অধিক সমস্যা বোধ করলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নিবেন।

ঘন ঘন মাথাব্যথা:

সপ্তাহ অনুযায়ী গর্ভাবস্থার ৯ম সপ্তাহের  এই সময়টায় ঘন ঘন মাথাব্যথা হতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায়  অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ সেবন করতে নিষধ করা হয়। গর্ভাবস্থায় মাথাব্যথা বা অন্য কোন শারীরিক সমস্যায় ওষুধ সেবনের আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ সেবন করা উচিত।

৯ম সপ্তাহে মা এর মানসিক যত্নঃ

এইসময়ে মা মানসিক ভাবে অবসাদজনিত কারনে একাকি বা ক্লান্ত অনুভব করেন।

একাকী/ বিষন্ন বোধ করাঃ

গর্ভাবস্থায় একাকীত্ব বা বিষন্ন বোধ করা খুব স্বাভাবিক। এই সময়ে মা চান অতিরিক্ত আদর বা যত্ন। এটি খুব স্বাভাবিক। তারপরেও মায়ের উচিত নিজেকে কাউন্সেলিং করা। যথাসম্ভব নিজেকে ব্যস্ত রাখা।

৯ম সপ্তাহে মা কি করবেনঃ

• গর্ভধারণকালীন ডায়বেটিস(gestational diabetes): এই সময়ে মায়ের gestational daibetis হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার যেন এড়িয়ে চলা যায় তা লক্ষ্য রাখবেন। অবশ্যই সুগার পরিক্ষা করবেন নিয়মিত। গর্ভাবস্থার ৯ম সপ্তাহে মা কি করবেনঃ

• দাতঁ এর যত্ন নিবেন

• বিশ্রাম নিবেন

• প্রয়োজনীয় মাল্টিভিটামিন ও ওষুধ গ্রহন করবেন।

• অবশ্যই নিজ ধর্মের প্রার্থনা তে মন দিবেন এবং নিজের সন্তানের ও নিজের মঙ্গল কামনা করে প্রার্থমা করবেন।

• গুগল করে বিভিন্ন রকম রিসার্চ করে প্রেগ্ন্যাসি রিলেটেড তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।

গর্ভাবস্থার ৯ম সপ্তাহ কি এড়িয়ে চলবেনঃ

গর্ভাবস্থা মা এর জন্য খুব আনন্দের বিষয়। কিন্তু এই সময়ে মা বা তার পরিবারের একটু অসাবধানতার জন্য মায়ের ও অনাগত সন্তানের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এই সময়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ক্ষতিকর। এই সময়ে মা এর দুশ্চিন্তা পরিত্যাগ করতে হবে। ভারি কাজ করা যাবে না।। প্রয়োজনে কারো সাহায্য নিতে হবে। এই সময়ে মায়ের উচিত হাসিখুশি থাকা। জাংক ফুড এড়িয়ে চলবেন। অধিক ভ্রমণ বা লম্বা জার্নি করবেন না। মা হওয়ার দীর্ঘ ৯ মাস মাকে সচেতনতার সাথে পার করতে হবে।

৯ম সপ্তাহে মায়ের ডায়েটঃ

ডায়েট মানে খাবার কন্ট্রোল নয়। আমরা অনেকেই ডায়েট শুনলেই বলি এই সময়ে ডায়েট কেন? এই সময়ে পুস্টিকর খাবার রুটিন করে খাওয়া উচিত। গর্ভাবস্থা মানে অসুস্থতা নয় তবে এই সময় মায়ের কিছু দিক নির্দেশনা মেনে চলা উচিত। খাবার তালিকা করে খাওয়া উচিত। জাংক ফুড বা ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলা উচিত। তবে খেতে ইচ্ছে করলে অল্প পরিমান অনুযায়ী খেতে পারেন তবে মা অনাগত সন্তানের ভাল অবশ্যই চিন্তা করে খাবেন। একেবারেই অনেক না পরিমাণে না খেয়ে বার বার অল্প অল্প করে কয়েকটি মিল নিতে পারেন। খাদ্যতালিকায় ফল, বাদাম, দুধ, ডিম, প্রোটিন যোগ করবেন।

সপ্তাহ অনুযায়ী সতর্কতাঃ

গর্ভাবস্থার একেক সপ্তাহে মায়ের শরীরের একেক লক্ষন থাকে। তবে প্রথম তিন মাস বা ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত মায়ের উচিত সতর্ক থাকা।

• প্রয়োজনীয় ফলিক এসিড, প্রি ন্যাটাল ভিটামিন গ্রহন করুন।

• প্রয়োজনীয় চেক আপ পূর্বের সপ্তাহে নিশ্চয়ই করেছেন। যদি না করে থাকেন তবে বিশেষজ্ঞ ডঃ এর পরামর্শে করে ফেলুন।

• হিমোগ্লোবিন ঠিক রাখতে রক্ত উৎপাদনকারী খাবার গ্রহন করুন।

• হালকা মুভমেন্ট বজায় রাখুন।

• আপনার সমস্যা পরিবারের সাথে শেয়ার করুন

• অনেক সময় মা পারিবারিক সাপোর্ট পান না, ভেংগে পড়বেন না। এই সময় থেকে নিজেকে বের করার চেষ্টা নিজেরই করতে হবে।

• যদি মা ৩৫ বছর এর উর্ধ্বে হয়ে থাকেন chorionic villus sampling (CVS) টেস্ট করা লাগতে পারে। এই টেস্টটি অবশ্যই ৯-১২ সপ্তাহের মাঝে করতে হয়। আপনার চিকিৎসক আপনার কিংবা আপনার স্বামীর জেনেটিক তথ্য নিয়ে প্রয়োজন হলে করবেন।

[ সূত্রঃhttps://americanpregnancy.org/]

 

Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

আরও পড়ুনঃ
গর্ভাবতী মা এর অধিক গরম লাগার কারন ও করনীয়
গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মা এর রোজায় করনীয়
গর্ভধারণে বিলম্বিত? কোন ভুল করছেন না তো?
গর্ভকালীন ডায়বেটিস এ মা এর করণীয়
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে করনীয়
নবজাতক এর কিছু সাধারন সমস্যা
আবহাওয়া অনুযায়ী শিশুর পোশাক
শিশুর কৃমি থেকে কিভাবে মুক্তি পাবেন?

বাবার জন্য টিপসঃ

আপনার স্ত্রীকে মানসিক সাপোর্ট দিন। সে আপনার বাচ্চার মা, একজন নারী। শারিরীক ও মানসিক কস্ট করছে সে প্রতি মূহুর্তে। আপনার সাপোর্ট খুব প্রয়োজন তার।

মায়ের জন্য প্রতিটি আয়োজন আমাদের রিসার্চ, অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণা থেকে। অনেক কিছুই হয়তো জানতেন না, জানতে পারছেন। আপনাদের যদি ভাল লাগে অবশ্যই অন্যের মায়ের সাথে শেয়ার করবেন।

সম্পর্কিতপোস্ট

সম্পর্কিত পোস্ট

মন্তব্য করুন বা প্রশ্ন করুন ?

অনুসরণ করুন

error: Content is protected !!