নবজাতককে দুধ খাওয়ানোর কৌশল

নবজাতককে দুধ খাওয়ানোর কৌশল

নবজাতককে দুধ খাওয়ানোর কৌশল রপ্ত করা নতুন মায়ের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং । মা হওয়া একজন নারীর জন্য অনেক বড় পাওয়া। তবে মা হওয়ার পর মাকে অনেক নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। তেমনি মা হওয়ার পর নবজাতক কে বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে অনেক সময় মাকে দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়তে হয়। তাই নতুন মায়ের জন্য নবজাতককে দুধ খাওয়ানোর  কৌশল রপ্ত করে নিতে হবে । প্রায় ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি হলে মায়ের বুকে দুধ নেমে যায় কিন্তু সিজারিয়ান ডেলিভারিতে মায়ের বুকে দুধ নামতে তিনদিন সময় নেয়। কারো আগে নামে কারো বা দেরিতে। এই সময়ে মায়ের ধৈর্য্যহারা হলে চলবে না। অনেক চিকিৎসক এই সময়ে ফর্মুলা মিল্ক পরামর্শ দেন, আবার অনেক চিকিৎসক বুকের দুধ এর জন্য চেস্টা করতে বলেন। এই সময়টা মা ও বাচ্চার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং ও কস্টদায়ক। আসুন আজ আমরা জেনে নেই নবজাতক শিশুকে কিভাবে মা বুকের দুধ খাওয়াবেন এবং নতুন মায়ের জন্য বুকের দুধ খাওয়ানোর কৌশল।

 নতুন মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর কৌশল:

বুকের দুধ খাওয়ানোর কৌশল জানা না থাকলে নতুন মা সমস্যাগ্রস্ত হতে পারেন ।মা শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সঠিক উপায় না জানার জন্য অনেক সময় মায়ের বুকের দুধ ক্র্যাক হয়ে যায়, ফেটে যায়, ছিলে যায়। এতে মা ও শিশু দুইজনের ই কস্ট হয়। তাই মায়ের আগে থেকেই জেনে রাখা উচিত এবং বাচ্চা প্রসবের পর ভাল ভাবে পদ্ধতি অনুসরন করতে হবে। নইলে প্রসব পরবর্তী সময়ে নবজাতক শিশুকে দুধ পান করানো মায়ের জন্য কস্টকর হয়ে পড়বে। 

কিভাবে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুত করবেন?

স্বাভাবিক ডেলিভারি কিংবা সিজারিয়ান সেকশন এ মা সন্তান জন্মদানের পর ২-৩ ঘন্টার মাঝেই দুধ পান করানোর কথা বলা হয়। এছাড়াও প্রথম ১০-১৫ দিন মায়ের শিশুকে দুধ পান করানোতে অভ্যস্ত করতে এবং নিজে অভ্যস্ত হতে সময় লেগে যায়৷ তাই আজ জেনে নেই কিভাবে শিশুকে দুধ খাওয়ালে সহজ হবে উভয়ের জন্য। এজন্য মায়ের উচিত দুধ খাওয়ানোর কৌশল সম্পর্কে জেনে রাখা।

ধৈর্যসহকারে প্রচেষ্টা:

শিশুকে খাওয়ানোর জন্য কয়েকবার ধৈর্য সহকারে চেষ্টা করতে হবে। ভাগ্য প্রসন্ন থাকলে অল্পেই কাজ হয়ে যাবে অর্থাৎ শিশু ল্যাচিং বুঝে ফেলবে। তা না হলে আরেকটু কষ্ট করতে হবে বৈকি

অভিজ্ঞতা:

বুকের দুধ খাওয়াতে চাইলেই যে সব মা প্রথমেই সহজে সফলভাবে তা করতে পারবেন সেটা নাও হতে পারে। তবে একেক মায়ের অভিজ্ঞতা একেক রকম। তাই অন্য মায়ের সাথে যা হয়েছে তা আপনার সাথেও হবে ভেবে নিবেন না।

সংস্থাপন :

মায়ের দুধ খাওয়ানোর কৌশল রপ্ত করার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এ্যারিওলা মুখে ঢুকানো। শিশুকে তার বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য শুধুমাত্র স্তনের বৃন্ত বা বোঁটা নয় স্তনের কালো অংশ পুরোটা যেটি (এরিওলা) নামে পরিচিত তা শিশুকে মুখে দেয়ার চেষ্টা করবেন। কেননা যদি শুধু বোঁটা কিংবা বৃন্ত মুখে দেন শিশু দুধ পাবে না ফলে মা এর কষ্ট হবে সাথে শিশু ও দুধ পাবে না। অনেক সময় সঠিক ভাবে স্তন শিশুর মুখে সংস্থাপন না করাতে পারলে মা এর স্তন ফেটে যায় বা চিড়ে যায়।

টিস্যুতে সংক্রমণ:

শিশুর ঠিক ভাবে ল্যাচিং না করতে পারার জন্য অর্থাৎ এরিওলা সহ না চোষার জন্য মা এর স্তন ফুলে যায় এবং ব্যাথা হয়। কিংবা স্তন বৃন্ত ফেটে যায়। ফাঁটা স্থানে অনেক সময় ছত্রাক / ইনফেকশন হতে পারে। মা যদি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ না নেন তবে ওই ইনফেকশন আক্রান্ত স্তন শিশু ল্যাচিং করে দুধ খেলে শিশুর মুখে ইনফেকশন যেতে পারে। কেননা দুধ ভাল ভাবে খাওয়াতে না পারার জন্য মায়ের স্তনের টিস্যুতে সংক্রমণ হয়ে যায়।

 বুকের দুধ খাওয়ানোর কৌশল
বুকের দুধ খাওয়ানোর কৌশল

জ্বর ও মাস্টোসিস :

অনেক সময় দুধ পান করানোর সময় মায়ের স্তনে ব্যাথা হয় এবং জ্বর আসে। প্রায় রাতেই জ্বর আসতে পারে। মাস্টোসিস নামক ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশন এর জন্য এমনটা হয়। তখন মা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নিবেন।

ব্যথা ও ক্র্যাক:

মা যদি শিশুকে যথাযথ ভাবে দুধ খাওয়ানোর সময় সঠিকে স্থানে রাখতে না পারেন তবে মায়ের স্তন এ ব্যাথা হতে পারে। মা যদি ল্যাচিং করাতে বা শিশুকে সঠিক ভাবে যদি দুধ খাওয়াতে না পারেন তবে শিশু ক্ষুধার্ত থেকে যাবে এবং একটানা চুষতে চাইবে। এতে মা এর স্তন ক্র্যাক হবে।

ক্লান্তও খিটমিট : মা যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি ভালোভাবে রপ্ত করতে না পারেন তবে দুধ না পাওয়ার ফলে শিশু কান্না করবে, খিটমিট করবে, ক্লান্ত হয়ে যাবে।

দুধ নালী বন্ধ হয়ে যাওয়া:

মা যদি শিশুকে সঠিক উপায়ে দুধ পান না করাতে পারেন, তবে মা এর দুধ সরবরাহ বাধাঁগ্রস্থ হয়ে দুধ নালী বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দুধ প্রবাহ কমে যায়।

এনগোর্জমেন্ট সৃষ্টি :

বুকের দুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি না জানলে অনেক সময় মায়ের অতিরিক্ত দুধ জমে যায়৷ ফলে অতি দুধ প্রবাহের ফলে শিশু দুধ পান করতে পারে না ফলে এনগোর্জমেন্ট সৃষ্টি হয়। তাই মায়ের করনীয় প্রথমে একটু দুধ প্রেস করে বা চেপে বের করে নিবেন। যেন শিশু দুধ পান করতে পারে।

ল্যাচ থেকে সরানো:

বুকের দুধ খাওয়ানোর কৌশল জানা না থাকলে নতুন মা হতাশাগ্রস্থ হতে পারেন । শিশুর দুধ খাওয়া বা ল্যাচ অনেক টা শক্তিশালী। কেননা শিশু খুব শক্ত ভাবে দুধ চুষতে থাকে, তাই মা যদি শিশুর মুখ থেকে সরাতে চান ধীর প্রক্রিয়ায় টেনে বের করবেন।

যত্ন ও মেসেজ করা:

নবজাতক শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হলে মাকে স্তনের প্রতি যত্ন নিতে হবে। যেকোনো আরামদায়ক অবস্থানে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো যায়। নব্য প্রসুতি মায়ের স্তনে কালো আস্তরন পড়ে। গর্ভাবস্থার ৬ মাস থেকে নিয়মিত পরিষ্কার করবেন। এছাড়াও প্রত্যেকবার দুধ খাওয়ানোর আগে স্তন ম্যাসাজ করে নেবেন। আলতো করে স্তনের কালো অংশের পেছনে ম্যাসেজ করবেন। খাওয়ানোর পরও ম্যাসেজ করুন। কেননা প্রাথমিক পর্যায়ে মায়ের দুধ এর ফ্লো অনেক থাকে, ফলে জমাট বেধেঁ থাকে। ম্যাসাজ করে নিলে মা ও শিশুর জন্যে প্রক্রিয়াটি আরামদায়ক উপযোগী হবে।  

টিপস:

নবজাতককে দুধ খাওয়ানোর কৌশল জানা না থাকলে নতুন মা হতাশাগ্রস্থ হতে পারেন । মা বাচ্চা প্রসবের পর শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় খুব নাজুক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন তাই এ সময় মায়ের প্রয়োজন মানসিক সাপোর্ট এবং সঠিক দিকনির্দেশনা। দুধ পান করানো ব্যাথাহীন প্রক্রিয়া৷ কোন কারনে যদি মা ব্যাথা পান অবশ্যই আপনার গাইনী চিকিৎসক এর পরামর্শ নিন।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

আরও পড়ুনঃ
গর্ভধারণে বিলম্বিত? কোন ভুল করছেন না তো?
গর্ভকালীন ডায়বেটিস এ মা এর করণীয়
গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে করনীয়
গর্ভাবতী মা এর অধিক গরম লাগার কারন ও করনীয়
গর্ভধারনের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ
গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মা এর রোজায় করনীয়

সম্পর্কিতপোস্ট

সম্পর্কিত পোস্ট

মন্তব্য করুন বা প্রশ্ন করুন ?

অনুসরণ করুন

error: Content is protected !!