নবজাতক এর কিছু সাধারন সমস্যা

নবজাতকের ঘুমের সময়সূচীনবজাতকের ঘুমের সময়সূচী

নবজাতক শিশুকে নিয়ে মা বা পরিবারের সবাই একটু  বেশিই সচেতন থাকেন।। সব কিছুই নতুন। কেননা একেক নবজাতকের বৈশিষ্ট্য একেক রকম। তবু কিছু ব্যপার জানা থাকলে সহজ হয়ে যায় অনেক কিছু মায়ের জন্য। কেননা মা এর চেয়ে আর কেউ অস্থির হবে না এই সময়ে।।।
আসুন আজ জেনে নেই নবজাতক এর কিছু সাধারন সমস্যা যা মা এর জন্য পথ প্রদর্শক।।

নবজাতক এর কিছু সাধারন সমস্যাঃ

পায়খানার তারতম্যঃ নবজাতক জন্মের পর থেকে ৭ দিন শিশু কাল, সবুজাভ পায়খানা করতে পারে। এর পর যদি নবজাতক শুধু মাত্র বুকের দুধ খায় তবে পায়খানার ধরণ নিয়ে দুশ্চিন্তা কিছু নেই। নবজাতক দিনে ২০-২৫ বার পায়খানা করতে পারে, আবার চার পাঁচদিনে একবার ও করতে পারে। দুটিই স্বাভাবিক বলে ধরা যায়। সারাদিনে হালকা পানি টাইপের পায়খানা যেতে পারে।। তবে ৫-৬ মাসের মাঝেই এগুলো ঠিক হয়ে যায়।

দুধ বমিঃ নবজাতক দুধ খাওয়ার সময় বাতাস টানা, কাশি দেয়া, অতিরিক্ত কান্না করতে পারে। এর ফলে নবজাতক শিশু দুধ বমি করতে পারে। নবজাতকের খাদ্যনালী এবং পাকস্থলীর সংযোগস্থল বড়দের চেয়ে আলাদা হয়ে থাকে। শিশুর ওজন বৃদ্ধি এবং বিকাশ সুষ্ঠুভাবে হলে চিন্তার কিছু নেই। ছয় মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে এই সমস্যা ওষুধ ছাড়াই সেরে যায়।। তারপরেও মা এর মনে কোনো সন্দেহ উদ্রেক হলে শিশু বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ নিতে পারেন।

Laryngomalacia‘ল্যারিন্গোম্যালাশিয়াঃ গলায় আওয়াজ, বুক ঘরঘর করা সমস্যা একদম স্বাভাবিক। কেননা জন্মগতভাবে শিশুর গলার স্বরনালী নরম থাকে এর ফলে নিঃশ্বাস নেয়ার সময় সরু হয়ে যায়। একধরনের ঘরঘর শব্দ হয়। নতুন মা ভাবেন শিশুর ঠান্ডা লেগেছে। কারন বুকে কফ জমে গেলে এই ধরনের শব্দ হয়। এই ক্ষেত্রে নিশ্চিন্ত থাকা যেতে পারে।  বারো থেকে আঠারো মাসের মধ্যে এই সমস্যা চলে যায়। কোন ওষুধের প্রয়োজন নেই। এরপরেও সন্দেহ হলে শিশু বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ নিবেন।

জন্ডিসঃ জন্মের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় দিনের মধ্যে একধরনের জন্ডিস হয় যা ধীরে ধীরে কমে যায়। কিন্তু রক্ত পরিক্ষা করে যদি জন্ডিসের বিলিরুবিন এর মাত্রা ৯-১০ এর উপরে থাকে তবে বাচ্চাকে ফটোথেরাপি দিয়ে নেয়া ভাল।।

Erythema Toxicum Neonatorum অর্থাৎ বাচ্চার চামড়ায় লালদাগঃ নবজাতকের জন্মের কয়েকদিন এর মাঝে এই ধরনের সমস্যা দেখা যায়। বাচ্চার মুখে লাল স্পট হতে পারে বা গায়ে দানা দানা উঠতে পারে।। যা জন্মের ১-৪ সপ্তাহের মাঝে চলে যায়।। বিশেষ করে প্রি ম্যাচুয়ের শিশুর ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়। এই সম্পর্কে মা বাবার ধারনা থাকে না তাই ভয় পেতে পারেন।

নাভির হার্নিয়াঃ অনেক শিশুর নাভির হার্নিয়া রোগ হয়ে থাকে।। বাচ্চার অতিরিক্ত কান্নার জন্য নাভিতে চাপ পড়ে বা কোন কারন ছাড়াই ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে।৬ মাস থেকে এক বছরের মধ্যে ওষুধ ছাড়াই ভাল হয়ে যায়।

অতিরিক্ত কান্না/কলিক বাচ্চাঃ নবজাতক শিশু বিভিন্ন কারনে কান্না করতে পারে। ক্ষুধা, ঘুম, প্রস্রাব-পায়খানা, গ্যাস এর জন্য কান্না করে । কলিক বেবি হলে মা কে ধৈর্য্যশীল হতে হবে। এই ক্ষেত্রে বাচ্চা ৬ মাস পর্যন্ত কান্না করতে পারে। কোনও ভাবেই বাচ্চার কান্না থামানো যাবে ন।। আপাত দৃস্টিতে দেখে মনে হবে বাচ্চার খুবই কষ্ট হচ্ছে। কান্না করার সময় হাত মুট করে রাখবে এবং মুখ লাল হয়ে যাবে। কিছুক্ষণের জন্য কান্না থামালেও আবারও কান্না শুরু করবে।কান্না করতে করতে শ্বাসটান /হেচকি উঠে যেতে পারে।  এক্ষেত্রে বাচ্চাকে কাঁধে নিয়ে ঢেঁকুর তোলানো যেতে পারে।

নবজাতকের ঘুমঃ নবজাতক ১৭-২২ ঘন্টা ঘুমাতে পারে, যা বয়স বাড়ার সাথে কমতে থাকে। আবার অনেক বাচ্চা কম ঘুমিয়ে থাকে।।

মেয়ে নবজাতকের ক্ষেত্রেঃ মেয়ে নবজাতকের যোনি পথ দিয়ে রক্ত যেতে পারে। এতে ভয়ের কিছু নেই। এটি স্বাভাবিক।।

ছেলে নবজাতকের ক্ষেত্রেঃ ছেলে শিশুদের লজ্জাস্থান(পেনিস) এর ছিদ্র অনেক ছোট থাকে। ফলে প্রস্রাবের সময় শিশু কান্না করে। ডঃ এর পরামর্শে ওষুধ দিতে পারেন বা মেসেজ করতে পারেন।

পা কাপাঃ অপরিপক্ব মস্তিষ্কের জন্য অনেক শিশুর পা কাঁপতে থাকে, যা ধরলে থেমে যায়। কোন ওষুধ লাগে না।।।অনেক ডায়বেটিক মা এর সন্তান ক্ষেত্রে ও এমন হয়ে থাকে।।

শিশু হামঃ ছয় থেকে চব্বিশ মাসের বাচ্চাদের শরীরে লাল দানা দেখা যায়, আবার খুব দ্রুত মিশে যায়।।এগুলো হাম নামে পরিচিত। এক্ষেত্রেও কোন ওষুধের প্রয়োজন নেই।

এইগুলা নবজাতক এর কিছু সাধারন সমস্যা।। যা মা আগে জেনে থাকলে অস্থির হবেন না। এই লক্ষণগুলোর সাথে অন্য কোন গুরুতর সমস্যা অনুভব করলে শিশু বিশেষজ্ঞ এর সাথে কথা বলতে পারেন।। পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দিবেন।

আপনি জেনে উপকৃত হলে অন্য মা এর সাথে শেয়ার করুন।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

আরও পড়ুন
নবজাতকের ঘুমের সময়
আবহাওয়া অনুযায়ী শিশুর পোশাক
শিশুর কৃমি থেকে কিভাবে মুক্তি পাবেন?
মোবাইল স্ক্রিনিং বা গেজেট আসক্তিতে বাচ্চাদের কিভাবে সামলাবেন?

সম্পর্কিতপোস্ট

সম্পর্কিত পোস্ট

মন্তব্য করুন বা প্রশ্ন করুন ?

অনুসরণ করুন

error: Content is protected !!