শিশুর ওজন বাড়াতে যেসব খাবার খাওয়াবেন

শিশুর-ওজন-বাড়াতে-যেসব-খাবার-খাওয়াবেন

শিশুর ওজন  নিয়ে অনেক মা-বাবা দুশ্চিন্তায় থাকেন। ওজন বাড়ানোই মূল লক্ষ্য হোওয়া উচিত নয়। ওজন যদি ওজন চার্ট অনুযায়ী ঠিক থাকে তবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। শিশুর ওজন যদি কম থাকে তবে শিশুর ওজন বাড়াতে শিশুর খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। খাবার খাওানোর ক্ষেত্রে কিছু নিয়মাবলী অনুসরন করা উচিত। একেক শিশুর বেড়ে হার একেক রকম।  সুস্থ ওজন বৃদ্ধি করতে সুষম খাবার নিশ্চিত করা। সুষম খাবার আপনার সন্তানের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি সরবরাহ করে।

শিশুর ওজন বাড়ানো কেন জরুরি

কিছু শিশুর ওজন কিছুতেই বাড়তে চায় না। প্রতিটি শিশুর আদর্শ ওজন থাকা জরুরি। অতিরিক্ত ওজন যেমন ভালো নয়, স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনও ঠিক নয়। ওজন কম থাকলে শিশুদের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। মনে রাখতে হবে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার শিশুর মস্তিষ্ক সক্রিয় ও সতেজ রাখে । শিশুর ওজন নিয়ে কোনো উদ্বেগ থাকলে, অবশ্যই শিশু ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলতে ভুলবেন না। শিশুর বুদ্ধি বিকাশে এবং ওজন বাড়াতে পুষ্টিকর যেসব খাবার খাওয়াবেন তার একটি চার্ট নিচে দেওয়া হল।

শিশুর ওজন বৃদ্ধি করবে যেসব খাবারঃ

  • দুগ্ধজাত খাবার

ওজন বৃদ্ধিতে দুগ্ধজাত খাবার গুরত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেটের উৎস দুধ! পনির, মাখন এবং দুধের মতো খাবার স্বাস্থযকর ভাবে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। দুধে রয়েছে চর্বি, ক্যালসিয়াম এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন, যা মজবুত হাড় গঠনে সাহায্য করে। এছাড়াও, অনেক দেশে দুধকে ভিটামিন ডি দিয়ে শক্তিশালী করা হয়, যা ক্যালসিয়াম শোষণকে উন্নত করে।

প্রতি 100 গ্রাম দুধের পুষ্টির মান  (10):

শক্তি (KCAL) ফ্যাট (গ্রাম) প্রোটিন (গ্রাম)
42 1 3.4
  • কলা

কলাকে বলা হয় সুপারফ্রুট। শক্তির ভালো উৎস বলা হয় কলাকে। এতে আছে ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬। এ সব উপাদান শিশুর শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কলা দিয়ে মিল্কশেক, প্যানকেক, কেক ও মাফিন প্রস্তুত করে খাওয়ানো যেতে পারে।

  • ডিম

প্রোটিনের খুব ভালো উৎস ডিম। এতে আছে সাচ্যুরেটেড ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল। শিশুর চাহিদা মেটাতে  প্রোটিনের ভূমিকা অপরিসীম। ডিম থেকে শিশুর শরীরে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, সব কিছুর চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে। ডিম শরীরের পেশী এবং টিস্যু বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ডিম ভালোভাবে সিদ্ধ করে ছোট বাচ্চাদের অল্প পরিমাণে খাওয়াতে হবে।

ডিম প্রতি পুষ্টির মান(3):

শক্তি (KCAL) ফ্যাট (গ্রাম) ) প্রোটিন (গ্রাম)
78 5 6
  • আলু ও মিষ্টি আলু

শিশুর স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ওজন বাড়াতে আলু ও মিষ্টি আলু সহায়তা করে। শিশুর ওজন বাড়াতে চাইলে তার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কমপক্ষে ৪০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট রাখতে হবে। কার্বোহাইড্রেটের সবচেয়ে ভাল উৎস হল আলু। আলুতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড ডায়েটারি আঁশ যা সব বয়সী শিশুদের ওজন শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শিশুর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে তাকে আলু ডিপ ফ্রাই না করে বেক করে খাওয়ান। সাধারণ আলুর বদলে মিষ্টি আলু খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। মিষ্টি আলু ফাইবার, ভিটামিন বি এবং সি এবং আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং সেলেনিয়ামের মতো খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এবং শরীরে বিটা-ক্যারোটিনের শোষণকে উন্নত করে। অতিরিক্ত আলু স্বাস্থ্যর ক্ষতি করে পারে

প্রতি 100 গ্রাম আলুতে পুষ্টির মান:

শক্তি (KCAL) প্রোটিন (গ্রাম) কার্বোহাইড্রেট (গ্রাম)
মিষ্টি আলু) 86 1.6 20
আলু(24)  77 2.05 17.49
  • শাকসবজি:

ওজন বাড়ানোই মূল লক্ষ্য হোওয়া উচিত নয় । শিশুর সুসাস্থ্যর জন্য শাক সবজি যোগ করতে হবে খাদযতালিকায়। শাকসবজি শিশুর মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। পাতাকপি ও পালংশাকে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন কে এবং বিটা ক্যারোটিন। যা শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। প্রতিদিন শিশুকে শাকসবজি খাওয়াতে চেষ্টা করুন।

প্রতি 100 গ্রাম সবজির পুষ্টির মান :

শক্তি (KCAL)  প্রোটিন (গ্রাম) কার্বোহাইড্রেট (গ্রাম)
65 2.9 13
  • মুরগির মাংস

শিশুর  সহজে হজমযোগ্য  প্রোটিন থাকে যেসব খাবারে তার মাঝে অন্যতম মুরগির মাংস। প্রোটিনের উৎস মুরগির মাংস। এটি পেশি মজবুত করে শিশুর ওজন বৃদ্ধি করে। হেলদি ওয়েট গেইন করতে সাহায্য করে মুরগির মাংস। তবে প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় মুরগির মাংস রাখবেন না। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন খাওয়াতে পারেন। এটি ভিটামিন বি 12 এর একটি দুর্দান্ত উত্স, সঠিক মস্তিষ্ক, স্নায়ু এবং রক্ত ​​কোষের বিকাশের জন্য একটি মূল পুষ্টিকর খাবার।

প্রতি 100 গ্রাম মুরগির পুষ্টির মান (4):

শক্তি (KCAL) ফ্যাট (গ্রাম)  প্রোটিন (গ্রাম)
239 13.40 24
  •  ঘিঃ

শিশুর খাদ্যতালিকায় ঘি রাখুন। ঘি উচ্চ পুষ্টিগুন সম্পন্ন। শিশুর ৮ মাস বয়সে হতে শিশুকে ঘি এর সাথে পরিচয় করান। পিউরী কিংবা খিচুড়ির সাথে ১/২ ফোটা ঘি এড করলে এতে পুষ্টিগুন অনেকটাই বেড়ে যায়। বাজারের ঘি নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলে বাসার তৈরী ঘি বা মালাই ক্রিম ব্যাবহার করা উচিত । স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে  ওজন বৃদ্ধিতে ঘি হতে পারে চমৎকার অপশন।

  • বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারঃ

শিশুর খাদ্যতালিকায় প্রতিদিনই বাদাম রাখুন। কারণ বাদামে রয়েছে ভিটামিন ‘ই’ যা মস্তিষ্কের সমন্বয় সাধনের ক্ষমতা বাড়ায়। কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, চীনাবাদামসহ যে কোনো ধরনের বাদামই শিশুর মানসিক বৃদ্ধিতে সহায়ক। শিশু যদি সুস্থ থাকে তবে শিশুর ওজন বাড়ানোর জন্য অহেতুক দুশ্চিন্তা করবেন না।একেক মানুষ যেমন একেক রকম, তেমনি একেক শিশুর বেড়ে ওঠার হার একেক রকম।মনে রাখবেন বাচ্চাদের স্বাস্থ্যকর খাবার অভ্যাস বজায় রাখা শারীরিক বৃদ্ধির জন্য বেশি জরুরি।

প্রতি 100 গ্রাম মিশ্র বাদামের পুষ্টির মান (চিনাবাদাম, কাজু, বাদাম, হ্যাজেলনাট,) (12):

শক্তি (KCAL) ফ্যাট (গ্রাম) প্রোটিন (গ্রাম)
607 54 20
  •  গুড়

গুড় হল এক ধরনের অ-পরিশোধিত চিনি। আখের রস ও খেজুর থেকে তৈরি গুড় মিহি চিনির চেয়ে ভালো। এটিতে লোহা সহ প্রয়োজনীয় খনিজ রয়েছে। আপনার সন্তানের ডায়েটে অতিরিক্ত ক্যালোরি সরবরাহ করতে, তাদের প্রিয় খাবারে গুড় যোগ করুন। এটি অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না কারণ এটি চিনির মতো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

প্রতি 100 গ্রাম গুড়ের পুষ্টির মান :

শক্তি (KCAL) ফ্যাট (গ্রাম) প্রোটিন (গ্রাম)
383 0.1 0.4

 

  • কলা

কলা পুষ্টিগুণে ভরপুর যা সহজে হজমে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি 6 রয়েছে, যা শিশুদের জন্য সেরা উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবারগুলির মধ্যে একটি করে।এটি ক্যালোরির খুব ভালো উৎস। ফলে এটি ওজন বৃদ্ধিতে খুবই চমৎকার একটি ফুড। সলিড ফুড বা পিউরী করে আপনার শিশুকে প্রতিদিন খাওয়াতে পারেন। ফলটি তাই ওজন বৃদ্ধির জন্য আদর্শ।

কলার পুস্টিগুন

শক্তি (KCAL) পটাসিয়াম (গ্রাম) প্রোটিন (গ্রাম)
105 0.4224 1.3

স্বাস্থ্যকরভাবে শিশুর ওজন বৃদ্ধির টিপস

স্বাস্থ্যকর খাবারগুলি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যোগ করে সুষম খাদ্য প্রস্তুত করতে পারেন ।  খাবার রান্না ও বিভিন্ন রকমের রেসিপির ব্যপারে ও খাবার পরিবেশনের সময় শিশুর সাহায্য নিন। এতে সে খাবারে আগ্রহী হয়ে উঠবে। শিশুর  স্বাস্থ্যকর ওজন বাড়ানোর জন্য, এই টিপসগুলি ব্যবহার করে দেখুন।

শিশুরা আপনাকে দেখেই শিখবে। আপনি যদি নিয়মিত নতুন খাবার চেষ্টা করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার  ফল, শাকসবজি  আপনার খাবার তালিকায় রাখেন তবে তাদের এই অভ্যাসগুলি গ্রহণ করার সম্ভাবনা বেশি।

করণীয় এবং এড়িয়ে চলা

  1. বাচ্চাদের অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহন   করতে দেবেন না
  2. আপনার সন্তানের দিনে খাবারের সময়কে নিয়মিত রুটিন করুন।
  3. সফট ড্রিংক্স, আলুর চিপস এবং ফাস্ট ফুডের মতো খাবারগুলি ওজন বাড়াতে পারে। এগুলি  কম পুষ্টিকর, তাই তারা আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যের কোন উপকার করবে না।  তাই উপরের খাবারের তালিকা থেকে  আপনার  শিশুর জন্য আরও পুষ্টিকর সম্পন্ন খাবার বেছে নিন।

তথ্যসূত্র:

  1. Vegetables, mixed, frozen, cooked, boiled, drained, without salt; USDA
  2. Weight changes in kids: Knowing when to act, what to say; Children’s Wisconsin
  3.  Helping Your Child Gain Weight; State of Wisconsin; Department of Health Services
  4. About Child & Teen BMI; Centers for Disease Control and Prevention
  5. Children’s diet – fruit and vegetables; Better Health

Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

সম্পর্কিতপোস্ট

সম্পর্কিত পোস্ট

মন্তব্য করুন বা প্রশ্ন করুন ?

অনুসরণ করুন

error: Content is protected !!