শিশুর খাবারে অ্যালার্জি

শিশুর-খাবারে-অ্যালার্জি

শিশুর নানা রকম অ্যালার্জির মাঝে খাবারে অ্যালার্জি অন্যতম। শিশুর খাবারে অ্যালার্জি আছে কিনা তা নির্ধারন করা অনেক জরুরি। কোনো একটি খাদ্যে গ্রহন এর ফলে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা গেলে সে খাবারে অ্যালার্জি আছে বলে বিবেচিত হয়।

খাবারে অ্যালার্জি কি?

কোনো কিছু খাওয়ার ফলে শরীরে অবস্থিত অ্যান্টিবডি-অ্যান্টিজেনের অতি সংবেদনশীলতা বা রি-অ্যাকশনকে খাবারে অ্যালার্জি বলে। শিশু বয়সে কোনো নির্দিষ্ট খাবার গ্রহণের পর অ্যালার্জি দ্বারা রি-অ্যাকশন হলে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

শিশুর খাবারে অ্যালার্জির লক্ষণগুলি কী কী?

শিশুর খাবারে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার ফলেএকটি ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া হয়, সেখানে হিস্টামিনের মতো রাসায়নিকগুলি শরীরে নিঃসৃত হয়। শিশুর খাবার থেকে অ্যালার্জি দ্বারা আক্রমনিত হওয়ার ফলে বিভিন্ন লক্ষন দেখা দেয়।শিশুর খাবারে অ্যালার্জির লক্ষণগুলি নিচে দেয়া হলঃ

  • ⦁ ত্বকে লাল লাল দাগ কিংবা লালচে দানার মত হয়।, চামড়ার নিচের আস্তরণসহ ফুলে যাওয়া। অনেক সময় চামড়া চুলকাতে থাকে এবং চাকা চাকা        হয়ে লাল হয়ে ফুলে ওঠে। র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি হতে পারে
  • ⦁ চোখ চুলকানো, চোখ দিয়ে পানি পড়া। চোখে জ্বালা অনুভূতি, চোখ খচখচ করা, চোখ লাল হতে পারে।
  • ⦁ ঠোঁট, জিহ্বা, গলা চুলকায়, ফুলে যায় ও লালচে হয়ে যায়।
  • ⦁ হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া।
  • ⦁ বুকে ব্যথা, নাড়ির গতি কমা-বাড়া, নিম্ন রক্তচাপ, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
  • ⦁ বমি বমি ভাব হয়, পেটে ব্যথা ও হতে পারে।

সবচেয়ে গুরুতর ক্ষেত্রে –

  1. 1. বমি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট কিংবা অ্যানফিল্যাকটিক শক দেখা দিতে পারে।
  2. 2. অ্যানাফিল্যাক্সিস একটি খাদ্য অ্যালার্জি যা গুরুতর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এটি জীবন-হুমকির লক্ষণ এবং উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে গলার ভিতরে ফুলে যেতে পারে, অনেক সময় গলার ভিতর শক্ত হয়ে।
  3. 3. রক্তচাপ কমে যেতে পারে। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কিংবা শক এ যেতে পারে রোগি
  4. 4. অ্যানাফিল্যাক্সিসের জন্য জরুরী চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিত্সা না করা হলে, অ্যানাফিল্যাক্সিস কোমা বা এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে
  5. 5. ফুড অ্যালার্জি প্রায়ই দেখা গেলেও মাঝে মাঝে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পরিণত হতে পারে। এক্ষেত্রে অনেক সময় খিঁচুনি ও দেখা যায়।

যেসব খাবারে শিশুর অ্যালার্জি হয়ঃ

যেসব খাবারে শিশুর অ্যালার্জি হয় তার নিচে দেয়া হল:

  • দুধঃ
    শিশুদের ফুড এলার্জি যেকোন খাবার থেকে হতে পারে তবে নির্দিষ্ট কিছু খাবার থেকে অ্যালার্জি আক্রমণ করতে পারে। অধিকাংশই শিশুদের মধ্যে সরাসরি গরুর দুধ পান, ফর্মুলা মিল্ক (যা গরুর দুধ থেকে তৈরি) দুধ পান অ্যালার্জির প্রধান কারণ।
    দেখা যায়, 3 বছরের কম বয়সী 2% থেকে 3% বাচ্চাদের দুধে অ্যালার্জি রয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা একসময় ধারণা করেছিলেন যে তিন বছরের মধ্যে শিশুরা দুধের এলার্জি ওভারকাম করতে পারবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে আরো বেশি সময় লাগছে এই এলার্জি থেকে ওভারকাম করতে । একটি সমীক্ষায়, 20% এরও কম শিশু 4 বছর বয়সের মধ্যে তাদের অ্যালার্জি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠে নি। https://acaai.org/allergies/allergic-conditions/food/milk-dairy/
  • ডিমঃ মুরগির ডিমের অ্যালার্জি শিশু এবং অল্প বয়স্ক শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ খাদ্য অ্যালার্জিগুলির মধ্যে একটি, তবে বয়স্ক শিশুদের এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কম সাধারণ। বেশিরভাগ শিশুই শেষ পর্যন্ত ডিমের প্রতি তাদের অ্যালার্জিকে ছাড়িয়ে যায় (৬ বছর বয়সে ৭১%), যদিও কিছু শিশুর সারা জীবন ডিমের প্রতি অ্যালার্জি থাকে।
  • চিনাবাদাম ,বিভিন্ন ধরণের বাদাম যেমন:কাঠবাদাম, আখরোট, ইত্যাদি থেকে ও অ্যালার্জি হতে পারে। এটি নির্ণয় করা জটিল হতে পারে। এই লক্ষণগুলি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে শিশুদের মধ্যে প্রায়ই চিনা বাদামে অ্যালার্জি দেখা যায়।চিনাবাদাম অনেকগুলো খাবারের মধ্যে একটি যা কোন খাবারে ব্যবহার করলে ফুড অ্যালার্জেন লেবেলিং এবং ভোক্তা সুরক্ষা আইনের অধীনে নির্দিষ্ট লেবেলিং এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । ২০০৪ আইনের অধীনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিনাবাদাম ধারণ করে এমন প্যাকেটজাত বিক্রি করা উপাদান হিসেবে খাদ্য পণ্যের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে এর নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

    শিশুর খাবারে অ্যালার্জি
    শিশুর খাবারে অ্যালার্জি

 

  • মাছ: মাছে (চিংড়ি, ইলিশ, সামুদ্রিক) এলার্জির সমস্যা হতে পারে। কিছু শিশুর মধ্যে এই মাছ খাওয়ায় মারাত্মক পরিমাণে এলার্জি হয়। যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের চিংড়ি, ইলিশ, সামুদ্রিক সামুদ্রিক মাছ থেকে দূরে থাকাই ভালো। স্যালমন, ম্যাকরল, টুনা সামুদ্রিক মাছের এলার্জি হলে স্কিন অত্যাধিক পরিমাণে ফুলে যায়। তবে মাছ খেলেই যে এলার্জি হবেই তেমন নয়। যাদের মাছে এলার্জি রয়েছে তাদের সমস্যা হতে পারে।
  • মাংস (গরু, হাঁস):  শিশুদের মাংস খেলে, বিশেষ করে গরুর মাংস ,হাঁস এর মাংস খেলে অ্যালার্জি হয়ে থাকে। মাংসে যদি অ্যালার্জি থাকে তবে প্রথমবার মাংস খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা একে ক্ষতিকর পদার্থ হিসেবে ধরে নেয় । ফলে এর বিরুদ্ধে ইমিউনোগ্লোবিন (IgE)নামের নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই অ্যান্টিবডি দেহের ইমিউন কোষের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ফলাফলসরূপ, মাংস ইমিউনোগ্লোবিন প্রচুর পরিমাণে হিস্টামিন ও অন্যান্য রাসায়নিক রক্তে ছড়িয়ে দেয়। এর প্রভাবে দেহে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞ্দের মতে মাংস (গরু, হাঁস) খাওয়ার মিনিট খানেক থেকে ১ ঘণ্টার মধ্যে যদি শরীরে কোনও অস্বাভাবিক সমস্যা দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে, সেই খাবারে  অ্যালার্জি রয়েছে।
  • গম, বার্লি জাতীয় শস্য: গমের পণ্য (রুটি, পাস্তা, কেক, বিস্কুট) থেকে শিশুদের অ্যালার্জির উদ্রেক হতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে শিশুর শরীরে গ্লুটেন প্রবেশ করলে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। গম, বার্লি, রাইজাতীয় শস্য থেকে তৈরি রুটিজাতীয় সব খাবারে থাকে গ্লুটন নামের পদার্থ। তাই শিশুদের যদি গমে অ্যালার্জি থাকে, তাহলে বার্লি বা অন্যান্য দানাশস্যের ক্ষেত্রেও সেই অ্যালার্জি দেখা যেতে পারে।

অ্যালার্জি থেকে দূরে রাখার উপায়ঃ

শিশুর অ্যালার্জি দূর করতে খাদ্য তালিকা পরিবর্তন থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক প্রতিকার সস্পর্কে জেনে এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

  • অ্যালার্জি থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো যেসব থেকে অ্যালার্জি আক্রমন করতে পারে তা থেকে দূরে থাকা।
  • যেসব খাবার থেকে অ্যালার্জির উদ্রেক হয় তা এড়িয়ে যাওয়া ।
  • অ্যালার্জিকে  প্রতিরোধ করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
  • অ্যালার্জি কমাতে বা দূর করার অন্যতম উপায় হল ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যালার্জির ওষুধ সেবন করা।
  • অ্যালার্জি দূর করতে সাহায্য করে যেসব খাবার আছে তা খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে ।
    ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার অ্যালার্জি দূর করতে সাহায্য করে।
  • বায়োফ্ল্যাভনয়েড, ব্রোমেলিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, জিংক সমৃদ্ধ খাবার অ্যালার্জি দূর করতে সাহায্য করে।

শিশুর অ্যালার্জি শনাক্তের টেস্টঃ

 

  •   রক্তের আইজিই টেস্ট
  •    স্কিন প্রিক টেস্ট
  •   স্কিন স্ক্রাচিং টেস্ট
  • স্কিন চ্যালেঞ্জ টেস্ট
  • রক্তের ইসোনোফিল টেস্ট

এইসব টেস্টে কোন কোন জিনিসের প্রতি অ্যালার্জি রয়েছে সেটি শনাক্ত করা যায়। ফলে চিকিৎসা সহজ হয়। অ্যালার্জেন ভ্যাকসিন প্রয়োজন কিনা সেটি জানা যায়।

শিশুর খাবার অ্যালার্জি কিভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়

শিশুর অ্যালার্জি ধরা পড়লে জীবনযাপন এবং খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আসে। যেসব খাবারে শিশুর অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়, সেসব খাবার খেলে শিশুদের দেওয়া যাবেনা ।জীবনযাপন ও খাবার তালিকা পরিবর্তন আনতে হবে ।যথাযথ মেডিসিন গ্রহণ করতে হবে। শিশুর খাবারে এলার্জি হয় দেখে ধারণা করে সব খাবার বাদ দেওয়া উচিত নয়। খাবার থেকে এলার্জির তৈরি সৃষ্টি হয় কিনা সেটি দেখার জন্য একটি তালিকা  তৈরি করা উচিত।

তথ্যসূত্রঃ

  1. https://www.nhs.uk/conditions/food-allergy/
  2. https://www.nhs.uk/conditions/baby/weaning-and-feeding/food-allergies-in-babies-and-young-children/
  3. https://www.healthdirect.gov.au/food-allergies-in-children
  4. https://acaai.org/allergies/allergic-conditions/food/

Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

সম্পর্কিতপোস্ট

সম্পর্কিত পোস্ট

মন্তব্য করুন বা প্রশ্ন করুন ?

অনুসরণ করুন

error: Content is protected !!