প্রসব পরবর্তী মায়ের যত্ন

প্রসব পরবর্তী মায়ের যত্ন 

মা এক অনবদ্য সৃষ্টি। মায়ের তুলনা মা ই। মা হওয়ার শুরু থেকে মা কে যেসব অবস্থার মধ্যে দিয়ে পথ
পাড়ি দিতে হয়, তা মাই জানেন।প্রসব এর পরে মায়ের প্রয়োজন সাহায্য এবং যত্ন। প্রসব পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে।

সন্তান জন্মের পর মায়ের যত্ন

  • নতুন শিশু এবং নিজের শারীরিক সমস্যা নিয়ে মা থাকেন বিপর্যস্ত। তাই এই মূহুর্তে কিভাবে মা তার সময়কে ভাল ভাবে পার করতে পারবেন সেটাই মুখ্য বিষয়। কমপক্ষে ১-৩ মাস শিশুর রুটিন বুঝতে এবং বাচ্চার স্বাভাবিক ধারা বুঝতে সময় লাগে মায়ের। আর এই সময়ে দ্রুত সেরে ওঠার জন্য নতুন মায়ের প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার ও সেই সাথে প্রসবোত্তর ব্যয়াম। কিন্তু এই ব্যায়াম ৬ মাসের পূর্বে শুরু করা যাবেনা। মা হওয়ার পর  মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে মায়েরা কনফিডেন্সহীনতায় ভুগেন। যা একদম ই অনুচিত। আপনার শরীরের উপর ধকল গিয়ে নতুন প্রান এসেছে পৃথিবীতে, তাই আপনার নিজের প্রতি সেল্ফ রেস্পেক্ট থাকতে হবে।
  •  প্রসব পরবর্তী সময়ে বেবি ব্লুজ, ডিপ্রেশন, নিজের পরিবর্তন কিংবা শিশুর দায়িত্ব, স্বামী কিংবা আপনজনদের প্রতি এক্সপেকটশন বেড়ে যায়। ফলে মায়ের ইমোশন ব্রেকডাউন হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে নিজেকে অযোগ্য মা হিসেবে ভাবতে থাকেন। যা ভুল। প্রিয়মানুষ গুলো যদি সাপোর্ট না দিয়ে থাকেন, মাকে নিজের ভাবনা নিজের ই ভাবতে হবে। মা কে মায়ের যত্ন নিজের ই করতে হবে। পরিবারের মানুষ যদি সহানুভূতিশীল হয়,তবে অনেক আপনার জন্য অনেক প্লাস পয়েন্ট। আর যদি না হয়, তবে নিজের ভাল করার জন্য যা প্রয়োজন তা করুন।
  • এই সময়ে কর্মশক্তির অভাব, কাজকর্মে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, ঘুম আসলে ও ঘুমাতে না পারার জন্য অস্থির ও বিরক্ত, অসাড় বোধ করা, হতাশ ও দোষী মনে করা সারাক্ষণ কান্না পাওয়া একদম স্বাভাবিক। আপনার স্বামীকে বা পরিবারকে বলুন আপনার সমস্যা। স্বামীকে নিঃসংকোচে বলুন আমার মাথায় হাত দিয়ে এক্টু বসো। আপনার সমস্যা যদি সবাই গুরুত্বহীন করে হাসাহাসি করে তবে কিছু টিপস নিজেই মেনে চলুন। তাহলে এসব পরিবর্তন দ্রুত সমাধান হয়ে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

প্রসব পরবর্তী মায়ের সময় বন্টন ও যত্ন

প্রসব_পরবর্তী_মা_এর_যত্নঃ
প্রসব_পরবর্তী_মা_এর_যত্নঃ
  • ধরা যাক, আপনি একক পরিবারে থাকেন এবং সারাদিন বাচ্চা কে নিয়ে কেটে যায়। তবে মা হিসেবে এক্টু হাঁপিয়ে যাবেন বৈকি। মা হিসেবে পথচলা কে যতটা মসৃণ করা যায়, ততই মঙল আপনার জন্য। তাই আপনার সংগী যদি সহযোগী মনোভাবের হয় তবে তাকে বলে যেকোন একটি টাইম আপনি ২০/৩০/৪০ মিনিটের জন্য হেঁটে আসুন। যদি এক্সারসাইজ ভেবে হাটতে চান, হাঁটুন।
  • যদি একা সময় কাটানো ভেবে হাঁটতে চান, হাঁটুন। যদি কাচা তরকারি কিনতে হবে ভেবে হাঁটতে চান, হাঁটুন। অন্তত নিজেকে ২০ টা মিনিট সময় দিন মা।হাঁটতে গিয়ে পার্লার কিংবা বিউটি সেলুন চোখে পড়লে চুল টা কাটিয়ে আসলেন। কিংবা কুইক ফেসিয়াল করে ফেলতে পারেন। মা হওয়ার পুর চুল কাটা এবং এক্টু যত্ন মাকে প্রানবন্ত করে তুলে।
  • সন্তান জন্মের পর শারীরিক পরিবির্তন ও মুটিয়ে যাওয়ার কারণে পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মায়েরা হীনমন্যতায় ভুগেন। তাই এসময়ে ডিপ ব্রাইট যা আপনাকে স্যুট করে ওই ধরনের ড্রেস বানিয়ে নিন নিজের যা পছন্দ অনুযায়ী । নিজের পছন্দের পোশাকে নিজেকে সাজান, এতে করে মন ভালো থাকবে। নতুন মায়ের মন প্রানোচ্ছল থাকলে সন্তানের উপরও ভালো প্রভাব পড়ে।

 

প্রসব পরবর্তী মায়ের খাবারের পুস্টিগুনঃ

প্রসব_পরবর্তী_মা_এর_যত্নঃ
প্রসব_পরবর্তী_মা_এর_যত্নঃ

 

প্রসব পরবর্তী মায়ের যত্ন  প্রয়োজন। প্রসব পরবর্তী সময়ে মায়ের উচিত খাদ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া। নতুন মায়ের খাদ্য ও পুষ্টি নিয়ে তাই সচেতনতা প্রয়োজন। কোন খাবার এ এনার্জি আছে, কোন খাবারে দুধ আসবে কিংবা কোন খাবার আপনার প্রসব পরবর্তী ওজন বাড়াবে তা জানা উচিত।
প্রসব পরবর্তী সময়ে চিনি, শর্করা জাতীয় কংবা হিডেন চিনি আছে এমন খাবার এড়িয়ে চলা ভাল।
প্যাকেট জুস, আচার, মিষ্টি দই, পাউরুটি, কমার্শিয়াল সিরিয়াল, কোল্ড ড্রিংক, দোকানের পরাটা
নান রুটি এগুলো চিনি দিয়ে তৈরি। এসব খাবার পরিহার করা উচিত।

  • সবজি( বাধাকপি, গাজর, কুমড়ো, লাউ, চাল কুমড়া) জাতীয় খাবার গ্রহন করা প্রয়োজন।
    যথাযথ হাইড্রেশন এর জন্য লাউ অনেক উপকারি।সন্তান এর জন্য দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে লাউ গুরুত্বপূর্ণ। লাউয়ের মধ্যে 95% এর কাছাকাছি পানীয় ভাগ থাকে। তাই হাইড্রেটেড করার ক্ষেত্রে এটি দারুন কার্যকরি।
  • তিল কিংবা কালো জিরা মায়ের জন্য খুব উপকারী।
  • মেথি ভিজিয়ে পানি পান করলে মায়ের জন্য উপকারি।
  • জোয়াইন গ্যাস রিলিফে সাহায্যকারী। জোয়াইনকে পানি দিয়ে ফোটাতে হবে। তারপরে ছেঁকে নিয়ে পান করতে হবে। মায়ের গ্যাস রিলিফ হবে।
  • পানি পান করা অতি গুরুত্বপূর্ণ। দিনে ৬-৭ লিটার পানি অনেক জরুরি। কেননা পানির অভাবে মায়ের শরীর ডি হাইড্রেশন এর কবলে পড়ে মাথা ঘুরানো সহ অস্থিরতার সৃষ্টি হয়।
  • আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবারঃ– থাইরয়েড হরমোন তৈরির জন্য প্রয়োজন আয়োডিন। থায়রয়েড এর কারনে শরীর হরমোনের ব্যালেন্সহীনতায় পড়তে পারে। থাইরয়েড শরীরের পুষ্টি,বিকাশ ও বৃদ্ধির সাথে জড়িত। দুগ্ধদানকারী মায়ের প্রতিদিন ১৯০ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিন প্রয়োজন। আয়োডিন পাওয়া যাবে সামুদ্রিক মাছ বা দৈনন্দিন খাবার থেকেই।
  • ডিম মায়ের জন্য অতীব জরুরি। ডিম এবং আমিষ মায়ের জন্য শক্তি জোগাবে।
  • ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন গ্রহন করা উচিত চিকিৎসক এর পরামর্শে।
  • জিরা পানি, হলুদ গুরো কিংবা বাদাম মায়ের জন্য পুস্টিকর এই সময়ে।
  • দুগ্ধ জাতীয় খাবার : দুধ এবং দুধ জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং স্নেহ জাতীয় পদার্থ রয়েছ। প্রতিদিন দুধ পান করুন। ক্যালসিয়াম, ভিটামিনসহ অনেকগুলো পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে এক গ্লাস দুধ। এছাড়া দুধ শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। মায়ের এনার্জি বাড়াবে এই দুধ।
  • ওমেগা ৩ ফ্যাট জাতীয় খাদ্য: মায়ের শরীর কে আগের অবস্থায় দিতে ওমেগা ৩ ফ্যাট জাতীয় খাদ্যের কোন বিকল্প নেই। প্রেগনেন্সির ধকল কাটিয়ে উঠতে খাবারের পরিপূর্ণতা নতুন মাকে সাহায্য করে। কাঠ বাদাম নিয়মিত খাওয়া উচিত নতুন মায়েদের।

 

প্রসব পরবর্তী মা এর খাওয়ার নিয়মঃ

প্রসব পরবর্তী মায়ের যত্ন  প্রয়োজন। প্রসব পরবর্তী মা এর খাওয়ার নিয়ম মেনে চলুন।

○যখনই খিদে পাবে, তখন শর্করা জাতীয় খাবার না খেয়ে প্রোটিন, জলীয় খাবার কিংবা ফল জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
○অল্প পরিমানে খাবেন ও ধীরে ধীরে খাবেন
○প্রত্যেকটি খাবারে যেন ভালো পরিমানে প্রোটিন থাকে
○ খাবারে শাক সবজি থাকা চাই

কি খাবার এড়িয়ে যাবেনঃ

প্রসব পরবর্তীতে মায়ের শারীরিক অবস্থা এমনি নাজুক থাকে,তাই
অ্যালার্জি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। তাই যেসব খাবারে মূলত অ্যালার্জি হয়ে থাকে, সেগুলি খাবেন না।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

সম্পর্কিতপোস্ট

সম্পর্কিত পোস্ট

মন্তব্য করুন বা প্রশ্ন করুন ?

অনুসরণ করুন

error: Content is protected !!