শিশুদের কথা শিখতে দেরি

শিশুদের কথা শিখতে দেরিঃ

শিশুদের কথা শিখতে দেরি হওয়ার অনেক কারন রয়েছে । শিশুদের দেরিতে কথা বলা- খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিশুর কথা বলা দেরি হওয়ার মানে  তার বিকাশে বিলম্ব হচ্ছে।  সব শিশুর বিকাশ এক রকম নয়। তবে তাই বলে শিশুর বিকাশ যদি বয়স অনুযায়ী না হয়ে থাকে, তা স্বাভাবিক নয়। 

তাই শিশুদের কথা শিখতে দেরি হওয়ার কারন বের করতে হবে । এ থেকে উত্তরনের জন্য করণীয় কি জানতে হবে।

শিশু চিকিৎসক ও মনোচিকিৎসকরা বলছেন, নানা কারণে শিশুরা দেরিতে কথা বলতে পারে৷ এটা বংশগত বা মস্তিষ্কে কোনো সমস্যার কারণেও হতে পারে৷  তবে যে কারন গুলো দেখা যাচ্ছে  শিশুদের কথা শিখতে দেরি হিসেবে তা নিচে দেয়া হলঃ

১ .  ডিভাইস বা স্ক্রিন এর আধিক্যতাঃ

 শিশু কথা বলার বয়সে যখন ডিভাইস বা স্ক্রিন এ আসক্ত হয়ে যায়, তখন শিশুর স্বাভাবিক কথা বলা ধীর গতির হয়ে যায়। দেখা গেছে, শিশুদের খাওয়ানোর কাজটা সহজ করতে অনেক পিতা-মাতা স্ক্রিনের সাহায্য নিয়ে থাকেন। বাচ্চাদের হাতে তুলে দেন মোবাইল, ট্যাব বা স্ক্রিনযুক্ত ডিভাইস। এতে শিশুরা ডিভাইসের স্ক্রিন এ আসক্ত হয়ে যায় । স্ক্রিন টাইম বেড়ে যাওয়ার কারণে শিশুদের বিকাশে যে দেরি হয় সেটা খুব সহজেই চোখে পড়ে। গবেষকরা বলছেন, বাচ্চারা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে যে সময়টা পার করছে, এই সময়ে শিশুরা গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেক কাজে অংশ নিতে পারে । এই সময়ে আরেকজনের সাথে কথা বলা ও শোনার দক্ষতা তৈরি হতে পারে। দৌড়ানো, কোন কিছু বেয়ে উপরে ওঠার মতো শারীরিক দক্ষতাও সে অর্জন করতে পারতো। কিন্তু স্ক্রিন টাইমিং এর জন্য শিশুদের কথা শিখতে দেরি হচ্ছে । তাই তাদের কাছ থেকে ডিভাইস দূরে রাখতে হবে বলে পরামর্শ দেন চিকিতসকরা ।

শিশুদের কথা শিখতে দেরি
শিশুদের কথা শিখতে দেরি

.  শিশুদের সঙ্গে বাবা-মার কোয়ালিটি সময় না কাটানোঃ

. শিশু বংশগত কারণে দেরিতে কথা বলা শুরু করতে পারে

৪. মস্তিষ্কের জন্মগত ত্রুটি।

৫.প্রসবকালীন জটিলতা।

৬. প্রসবোত্তর স্বল্পকালীন অসুখ , ভীষণ জ্বর, খিঁচুনি, জীবাণু সংক্রমণ, মস্তিকের ভেতর জীবাণু সংক্রমণ শিশুদের কথা শিখতে দেরি করায়

৭. জিহ্বার ত্রুটির কারণে অনেক শিশু ঠিকমতো কথা বলতে পারে না।

৮. বাচ্চার মানসিক প্রতিবন্ধকতা থাকলে শিশু দেরিতে কথা বলা শেখে।

শিশুর দেরিতে কথা বলা সমস্যয়  আমাদের করণীয়ঃ

১. শিশুর কথা বলা দেরি এড়াতে  শিশুদের  সঙ্গে কথা বলুন

ছোট শিশুদের বেড়ে ওঠার কিছু মাইলস্টোন থাকে। একটি নির্দিষ্ট বয়সে শিশুরা বসা শেখে, হামাগুড়ি দেয়া শুরু করে।  একটি নির্দিষ্ট বয়সে তারা কথা বলা ও শুরু করে। যদি দেখেন যে শিশুটি দেরিতে কথা বলছে না- তবে চিকিতসক দেখান । এক্ষেত্রে  যখন থেকে  শিশুর  কথা বলার সময়  তখন পরিবারের সকলকেই শিশুকে বেশি সময় দিতে হবে। পরিবারের অনেক দায়বদ্ধতা থাকে। শিশুকে যতটা সম্ভব নিজের কাছে রাখুন। শিশুর সঙ্গে কথা বলুন। শিশুর মুখ-চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। এতে শিশু যোগাযোগ শিখতে পারবে। বাবা মা বা পরিবারের অন্যরা শিশুকে ছড়া বা সুর করে গান শোনা্তে পারেন । আপনার শিশুর সঙ্গে কথা বলুন। শিশুর মুখ-চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। শিশুরা অল্প বয়স থেকেই অভিভাবকদের স্বর ও ভাষা বুঝতে শুরু করে দেয়। তাই শিশুর সামনে অন্যদের সঙ্গে কথা বলুন। 

 

২. শিশুরা খেলতে খেলতেও অনেক কিছু শেখে।তাই সঠিক খেলনা বাছাই করা অত্যন্ত গুরত্বপুর্ন। কথা শেখানোর জন্য রঙিন লেগো সেট, কিচেন সেট, রঙিন বই এগুলো বেশ ভালো উপকরন। খেলনাগুলোর কোনটা কী রং সেগুলো বারবার শিশুকে বলবেন। শরীরের অংগ প্রত্যঙ্গ চেনাতে চেনাতে হবে।তাহলে শিশু শুনে শুনে দ্রুত কথা বলার চেষ্টা করবে।

৩. শব্দের পুনরাবৃত্তি করুনঃ শিশুদের কথা শিখতে দেরি হওয়া এড়াতে  শিশুর সঙ্গে  শব্দের পুনরাবৃত্তি করুন। ওকে শিখানোর ছলে আপনি একি শব্দ বারবার ওর চোখ এর দিকে দৃষ্টি রেখে ও কানের দিকে পয়েন্ট করে বারবার শব্দ উচ্চারন করুন। 

 

৪ .আপনার  শিশুকে আপনার কথার  প্রতিক্রিয়া জানাতে দিনঃ

শিশুর সাথে কথা বলে শিশুকে বিভিন্ন কথা বলার এবং তার প্রতিক্রিয়া জানাতে সুযোগ দিতে হবে। শিশুরা আপনার কথা শুনে, তাতে প্রতিক্রিয়া জানাতে সময় নিতে পারে। তার প্রতিক্রিয়া কে সাধুবাদ জানান। উৎসাহ দিবেন । ডিভাইস ও স্ক্রিন এড়িয়ে চলুনঃ শিশুদের কথা বলা দেরিতে হওয়ার অন্যতম কারন মোবাইল আসক্তি। মা বাবা রা বাচ্চাদের হাতে তুলে দেন মোবাইল, ট্যাব বা স্ক্রিনযুক্ত ডিভাইস।কিন্তু এর ফলে  মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়  তা হয়তো জানেনই না। এতে শিশুদের দক্ষতার বিকাশে বিলম্ব ঘটে।  কথা বলতে এবং অন্যান্যদের সাথে মেলামেশা শিখতে দেরি হয়।

 

৫.শিশুর সাথে কথা বলার সময় মুখভঙ্গী ও অঙ্গভঙ্গী করুনঃ 

শিশুর সাথে কথা বলার সময়  মুখভঙ্গী ও অঙ্গভঙ্গীকরা উচিত । শিশুর কথা বলা দেরি এড়াতে তাই  বিভিন্ন ভঙ্গী করে দেখালে বাচ্চারা তা সহজে মনে রাখে ।শিশুর স্থানে নিজেকে নামিয়ে শিশুর সাথে কথা বলতে হবে। নিজের সন্তানকে কী ভাবে কথা বলা শেখাবেন তা একেবারেই আপনার সচেতনতার উপর নির্ভর করছে।

 

শিশুর কথা বলা দেরি হলে কি করনীয়ঃ

শিশুর কথা বলা দেরি হলে স্পিচ থেরাপি দিতে হতে পারে। এক্ষেত্রে মা বাবা শিশুর ডেভেলপমেন্ট দেরিতে লক্ষ্য করলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শ নিতে পারেন। এক্ষেত্রে শিশু বিকাশ কেন্দ্রে ও যোগাযোগ করতে পারেন।

স্পিচ থেরাপি কী?

স্পিচ থেরাপি হচ্ছে এক ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা, যার সাহায্যে জিহ্বায় আটকানো, তোতলামি, শিশুদের দেরিতে কথা বলা, কানে কম শোনাজনিত কথা বলার সমস্যা উত্তরনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে  ব্যবস্থা নেয়া হয়। যারা স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না, তাদের সাহায্য করে এই স্পিচ থেরাপি। এতে শিশুর অনেক উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। শিশু বিকাশ কেন্দ্রে ও যোগাযোগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে দ্রুত অ্যাসেসমেন্ট করে থেরাপি শুরু করলে ফল্প্রসু উপকার পাওয়া সম্ভব। শিশুর কথা বলা দেরি হলে একজন থেরাপিস্ট সহযোগিতায় এ ধরনের সমস্যা থেকে পরিত্রান সম্ভব। স্পিচ থেরাপি শিশুদের ভাষা বিকাশে সহায়তা করতে পারে। শিশুর দেরিতে কথা বলার জন্য  তাদের প্রতিদিনের কথায় আরও শব্দ যোগ করবেন। এতে শিশুরা করত অনুপ্রাণিত হবে। শিশুদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া, তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ বজায় রাখা বাবা-মায়ের কর্তব্য।

শিশুর সলিড শুরু করার সঠিক সময়

 

 

সম্পর্কিতপোস্ট

সম্পর্কিত পোস্ট

মন্তব্য করুন বা প্রশ্ন করুন ?

অনুসরণ করুন

error: Content is protected !!