গর্ভাবস্থার ১ম সপ্তাহ । সপ্তাহ অনুযায়ী

গর্ভাবস্থার ১ম সপ্তাহ

একটি মেয়ের মা হওয়ার অর্থ তার নারীত্বকে  পরিপূর্ণ করা।। সব মেয়েই চায় মা হতে। যখন একজন নারী গর্ভধারণ করে সেটি নয়মাসের এক দীর্ঘ যাত্রা। পুতুল খেলা শিশু থেকে মা হওয়ার জন্য শারীরিক আর মানসিক পরিবর্তনে একেক মেয়ের জন্য গর্ভধারণের গল্প একেক রকম। আজ আমরা গর্ভাবস্থার ১ম সপ্তাহ নিয়ে আলোচনা করবো।

গর্ভধারণ এর সময়ঃ
গর্ভধারণ করার  নয় মাস কে তিনটি ভাগ এ ভাগ করা যায়। প্রথম ট্রাইমেস্টার (Trimester), দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার এবং তৃতীয় ট্রাইমেস্টার।
প্রতি ট্রাইমেস্টার এ ভ্রূণের বৃদ্ধিতে মা এর শরীর এর বৃদ্ধি ও পরিবর্তন একেক রকম হয়ে থাকে। এই পরিবর্তন সম্পর্কে  ধারণা থাকলে সব কিছুই সহজ হয়।।
প্রথম ১ থেকে ১৩ সপ্তাহ নিয়ে প্রথম ট্রাইমেস্টার
অর্থাৎ প্রথম তিন মাস প্রথম ট্রাইমেস্টার।
আপনার কয়েকটি সাধারণ লক্ষন দেখা গেলে সহজেই বুঝতে পারবেন গর্ভধারণ করেছেন। 

ভ্রূন এর বয়সঃ
ভ্রূন এর বয়স নিয়ে মা বিভ্রান্ত হতে পারেন। কেউ বলে থাকেন দশ মাসে কেউ বলে থাকেন নয় মাসে বাচ্চা হয়।।।। বাচ্চা হওয়ার মোট সময় কাল (Full Term Pregnancy)  দশ মাস অর্থাৎ ৪০ সপ্তাহ। আসল কথা হচ্ছে মা এর শেষ মাসিকের (LMP-Last Menstrual Period) প্রথম তারিখ থেকে ভ্রূন এর বয়স গণনা শুরু হয়। আর দেখা যায় বেশির ভাগ মা ই তার পিরিয়ডের তারিখ মনে রাখতে পারেন না। তখন আল্ট্রাসাউন্ড এর মাধ্যমে ভ্রূন এর বয়স জানা যাবে।

ভ্রূন এর অবস্থাঃ
প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আসলে আপনাকে গর্ভবতী বলা যায় না।।  মাসিক শুরু হওয়ার ১২-১৪ দিনের মাঝে ডিম্বানু তৈরি হয়।। এই প্রক্রিয়াকে ডিম্বস্ফুটন বা ওভুলেশন বলে। এই সময় আপনার শরীর গর্ভধারণের প্রস্তুতি শুরু করছে এবং আপনার জরায়ু নিষিক্ত ডিম্বানুর আগমনের জন্য অপেক্ষা করছে।।

সফল গর্ভধারণের জন্য ডিম্বানুটি গর্ভনালির (Fallopian Tube) ভেতর থেকে বের হয়ে জরায়ুর দিকে এগোতে থাকে।। তবে ঠিক কোন সময়টিতে গর্ভসঞ্চার হবে, তা সহজে বলা যায় না। ডিম্বানুটি একসময় শুক্রানুর সাথে মিলিত হয়ে গর্ভাশয়ে অবস্থান নেয়। সেটিকে আমরা গর্ভধারন বলতে পারি।। কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ভ্রুণটি (Fetus) ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে।

গর্ভধারণ এর প্রথম সপ্তাহের লক্ষনঃ
গর্ভধারণ এর প্রথম সপ্তাহের লক্ষনগুলো দেখে বুঝা যায় না আপনি গর্ভধারন করেবেন কিনা। কেননা আপনি এখনও গর্ভবতী নন। কারন গর্ভধারণ এর পুরো প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। যেহেতু গর্ভসঞ্চার কবে হয়েছে ডঃ তা বলতে পারেন না তাই  মাসিক এর প্রথম তারিখ ই গননাা করা হয়।। তাই আপনি গর্ভধারন করতে পারেন কিনা, তা কিছু লক্ষন দেখে আপনি বুঝতে পারবেন আপনি গর্ভধারন করতে পারেন। বাইরে থেকে বুঝা না গেলেও শরীর এর ভিতরের পরিবর্তন হওয়া শুরু হয়েছে।

  • বমিঃ গর্ভধারণ এর প্রথম সপ্তাহে আপনি গর্ভধারন করেছেন কিনা তা শিওর না হলে ও যদি বমি ভাব হয় বুঝে নিতে  পারেন গর্ভধারণ এর প্রাথমিক লক্ষন।
  • সার্ভিকাল মিউকাসের পরিবর্তনঃ সার্ভিকাল মিউকাসের বৃদ্ধি গর্ভাবস্থার একটি প্রাথমিক লক্ষন। গর্ভধারণ হয়ে গেলে সার্ভিক্যাল মিউকাস ঘন হয়ে থাকে। আপনার পিরিয়ড মিস না হওয়া পর্যন্ত এই রকমই থাকবে।
  • শরীর এর তাপমাত্রা বৃদ্ধিঃ গর্ভধারণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে আপনার অতিরিক্ত গরম লাগবে। শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া গর্ভধারণ করার অন্যতম লক্ষন
  • রক্তক্ষরনঃ গর্ভধারণ হওয়ার পুর্বে অনেক সময় মা এর রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে।।
    পিরিয়ডের ডেট আসার আগে হাল্কা কালচে রক্তপাত হতে পারে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।। আপনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
  • ব্রেস্ট ভারী অনুভব করাঃ পিরিয়ডের ডেট আসার আগে আপনার ব্রেস্ট একটু ভারি অনুভব হতে পারে৷ তাহলে কিছুটা শিওর হতে পারেন আপনি গর্ভধারণ করেছেন।
  • খাবারের অরুচি বা গন্ধ ভাবঃ খাবারে অরুচি বা গন্ধ ভাব হয়ে হওয়া  গর্ভধারণ এর প্রাথমিক লক্ষন। যে খাবার স্বাভাবিকভাবে ভাল লাগে সেটা আপনার ভাল না লাগা বা অরুচি হলে ধরা যেতে পারে আপনি গর্ভবতী হতে পারেন।
  • অতিরিক্ত পিপাসা বা পানির চাহিদাঃ গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহে আপনার অতিরিক্ত পানির পিপাসা পেতে পারে।। গলা শুকানো ভাব বা পানির অতিরিক্ত চাহিদা মানেই গর্ভাধারনের বেশ ভালোই সম্ভাবনা থাকে। গর্ভধারনের প্রথম সপ্তাহে এটি ভাল ভাবে পরিলক্ষিত হয়।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যঃ প্রোজেস্টেরোন হরমোন পায়খানা শক্ত করে দেয় এবং হরমোনের তারতম্যতার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। যদি  হঠাৎ করেই কোষ্ঠকাঠিন্যেতে ভোগেন, তাহলে আপনার গর্ভাবস্থার পরীক্ষা করা উচিত।
  • ক্লান্তি ও ঘুমঃ গর্ভধারণ এর প্রথম সপ্তাহের লক্ষন এর মাঝে একটি হল ক্লান্তি ভাব হওয়া। এই সময়ে মা এর ক্লান্ত, অবসাদগ্রস্থ লাগতে পারে। অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব হওয়াটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়।
  • মুড সুইংঃ মুড সুইং গর্ভধারণ এর একদম প্রাথমিক লক্ষন। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটারগুলিকে প্রভাবিত করে, যার ফলে হুট করে রাগ থেকে শুরু করে হঠাৎ আবেগে ফেটে পড়া অস্বাভাবিক নয়।


গর্ভাবস্থার ১ম সপ্তাহ সপ্তাহে মা এর করনীয়ঃ
মা যদি গর্ভধারণ এর চেস্টা করে থাকেন তবে এটিই গর্ভধারণ এর প্রথম সপ্তাহ হতে পারে। তাই আপনাকে গর্ভধারণ এর প্রথম সপ্তাহে অবশ্যই কিছু ব্যাপার মেনে চলতে হবে।

  • গাইনী বিশেষজ্ঞ এর সাথে পরামর্শ করে . 04 মিলিগ্রাম ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করুন।
    এটি অন্তত তিন মাস পূর্বে শুরু করা উচিত।
  •  মাল্টিভিটামিন ও ক্যালসিয়ামও শুরু করা উচিত।।।
  • হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলার চেস্টা করুন। ধূমপান ও অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকুন।
  • ক্রনিক রোগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে আপনার বিশেষজ্ঞ ডঃ এর পরামর্শ নিন।
    ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, থায়রয়েড, হাপাঁনি বা শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে নিয়ম মেনে চলুন।
  • কফি বা ক্যাফেইন জাতীয় পদার্থ থেকে দূরে থাকুন।

এটিই হলো গর্ভাবস্থার ১ম সপ্তাহ সম্পর্কে কিছু ধারনা। পরের পর্বে ধারাবাহিক ভাবে ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত আলোচনা করা হবে।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

আরও পড়ুন:

গর্ভাবতী মা এর অধিক গরম লাগার কারন ও করনীয়
গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মা এর রোজায় করনীয়
গর্ভকালীন ডায়বেটিস এ মা এর করণীয়
গর্ভধারণে বিলম্বিত? কোন ভুল করছেন না তো?

সম্পর্কিতপোস্ট

সম্পর্কিত পোস্ট

মন্তব্য করুন বা প্রশ্ন করুন ?

অনুসরণ করুন

error: Content is protected !!