আর্টিকেলটিতে যা থাকছে -
গর্ভাবস্থায় বেড রেস্ট ( পরিপূর্ণ বিশ্রাম) ব্যাপারটি নিয়ে মায়েদের মাঝে অনেক বিভান্তি আছে। গর্ভাবস্থায় বিশ্রাম খুব দরকার। গর্ভাবস্থায় বেড রেস্ট অত্যাবশকীয় কিনা সে বিষয়ে অবগত থাকতে হবে । মা যদি এসব তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে থাকেন তবে মায়ের জন্য এই পথযাত্রা সহজ হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থা কোন অসুস্থতা নয়। এটি জীবনের একটি ধাপ কিংবা পর্যায়। গর্ভাবস্থায় বেড রেস্ট কিছু কারনে দেয়া হয়৷ ,এমন নয় একজন নারীর গর্ভাবস্থায় বেড রেস্ট নিতেই হবে। গর্ভাবস্থায় অবশ্যই বিশ্রাম জরুরি, তবে একদম বেড রেস্ট মায়ের শারিরীক অসুস্থতার জন্য দেয়া হয়। গর্ভাবস্থায় বেড রেস্ট অবশ্যই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে করা হয়, যা আপনার এবং গর্ভের ভ্রূণের অবস্থা বিবেচনা করে।
গর্ভাবস্থায় বেড রেস্ট হতে পারে কয়েক ধরণের। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।প্রতিটি মায়ের গর্ভাবস্থা বিভিন্ন রকম। সবার ক্ষেত্রে বেড প্রয়োজন নয়। তবে ডঃ এর পরামর্শ অনুযায়ী ডঃ মায়ের জন্য বেডরেস্ট প্রয়োজন কিনা বা সাময়িক বেড রেস্ট কোনটি প্রয়োজন তা সিদ্ধান্ত নিবেন।
গর্ভাবস্থায় বেড রেস্ট হতে পারে কয়েক ধরনেরঃ-
গর্ভাবস্থায় বেড রেস্ট কয়েক ধরনের হয়। কারো জন্য এই বেড রেস্ট সাময়িক। আবার কারো ক্ষেত্রে এটি পুরো নয় মাস জুড়ে বজায় থাকে। তবে ২০% নারীদের ক্ষেত্রে এই জটিলতা দেখা যায় ৷ বাকি নারীরা একদম সুস্থতা ভাবে এই পথ পাড়ি দিয়ে থাকেন। গর্ভাবস্থায় বেড রেস্ট এর ধরন গুলো নিচে দেওয়া হল-
- সম্পূর্ন বেড রেস্ট বা বিছানায় শুয়ে থাকা
- ভারী কাজ বা হাটা চলা নিষিদ্ধ
- অধিকাংশ সময় শুয়ে থাকা
- হাসপাতালে ভর্তি থাকা
সম্পূর্ণ বেড রেস্ট বা বিছানায় শুয়ে থাকাঃ
গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন জটিলতার কারনে মা কে সম্পূর্ণ বেড রেস্ট দেয়া হয়। পূর্ব ইতিহাস বা বর্তমান শারীরিক অবস্থা অবলোকন করে চিকিৎসক মাকে এই বেড রেস্ট দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে মায়ের অনেক সময় বাথরুমে যাওয়া ও চিকিৎসক অনুমতি দেন না।। তবে এই বেড রেস্ট সাধারণত নড়াচড়া, কাজ কর্ম না করাই অন্তর্ভুক্ত। মা দিনের অধিকাংশ সময় শুয়ে থাকবেন।
?তবে এই সময় যেন শুয়ে থেকে কর্মহীন থাকার জন্য ডায়বেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই খাবার পরিমিত খাওয়া উচিত।
? একটানা শুয়ে থাকতে মায়ের শরীরে জড়তা ভাব আসতে পারে তাই হাত, কাধঁ, ঘাড়, গলা, পায়ের পাতা নড়াচড়া করা উচিত।
? এক্ষেত্রে মা এর রান্না করা, গোসল করা, কিংবা হালকা কাজ করা ও নিষেধ করা হয়
ভারী কাজ বা হাটা চলা নিষিদ্ধঃ
গর্ভাবস্থায় ভারী কাজবা অতিরিক্ত হাটা চলা করা স্বাভাবিকভাবে নিষিদ্ধ। স্বাভাবিক কাজকর্ম করবেন। ভারী কাজ সীমিত করা হয়, যখন মায়ের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। কিন্তু জটিলতা থাকলে মায়ের হাটা চলা ও সীমিত করা হয় । ভারী কাজ, যেমন কাপড় কাচা, ভারী জিনিস তোলা, দ্রুত চলাফেরা এসব এড়িয়ে চলবেন।
অধিকাংশ সময় শুয়ে থাকাঃ
গর্ভাবস্থায় বেড রেস্ট এর মাঝে অনেক তারতম্য আছে৷ একেক গর্ভাবস্থা একেক রকম। রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে ডক্টর অনেক সময় অধিকাংশ সময় শুয়ে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে হবু মা গোসল, টয়লেট এ আসা যাওয়া বা ঘরে হালকা কাজ করতে পারেন। তবে শুয়ে থাকাই মা এর জন্য প্রেস্ক্রাইব করা হয়।
হাসপাতালে ভর্তি থাকাঃ
গর্ভাবস্থায় বেড রেস্ট মানে অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়৷ মায়ের শারিরীক অবস্থা যদি সুস্থ না হয় তবে সাময়িক সময় বা প্রয়োজন অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়।
★★ গর্ভাবস্থায় সব মাকেই বেড রেস্ট দেয়া হয় না। হাইরিস্ক পেসেন্ট কে বা জটিলতা থাকলে বেড রেস্ট দেয়া হয়।
কি কি কারনে বেড রেস্ট দেয়া হয়ঃ
গর্ভবতী মাকে যেসব কারনে বেড রেস্ট দেয়া হয় তা নিচে আলোচনা করা হল।
- একাধিকবার গর্ভপাত ঘটে থাকলেঃ গর্ভাবস্থায় বেড রেস্ট তখনই দেয়া হয় যখন একজন মায়ের একাধিক বার গর্ভপাত হয়ে থাকে অতীতে। অনেক সময় বার বার গর্ভপাত হলে ডক্টর গর্ভাশয়ের মুখ সেলাই করে দিয়ে বেড রেস্ট দিয়ে থাকেন।
- প্লাসেন্টা প্রিভিয়াঃ ইউটেরাসে প্লাসেন্টা নিচের দিকে নেমে গেলে বেড রেস্ট দেয়া হয়। এক্ষেত্রে নড়াচড়া করলেই মা এর ব্লিডিং হতে পারে। তাই সম্পূর্ণ রেস্ট দেয়া হয়। প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হলে বাচ্চার মাথা সঠিক অবস্থানে থাকে না। টোটাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া, পার্শিয়াল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া (Marginal/Partial Placenta Previa), লো লায়িং প্লাসেন্টা (Low Lying Placenta) এর জন্য অনেক সময় মিসক্যারেজ হয়ে যায়। প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হয়ে থাকলে বেড রেস্ট এর পাশাপাশি দৈহিক সম্পর্ক ও নিষিদ্ধ করা হয়। সূত্রঃwww.self.com
- জরায়ু জনিত সমস্যাঃ প্রথমত গর্ভাবস্থায় বেডরেস্ট তখনই প্রয়োজন হয়ে পড়ে , যখন মায়ের জরায়ু জনিত সমস্যা হয় । এছাড়া মায়ের জরায়ু জনিত পূর্বে থেকে থাকে, তখনই বিশ্রাম দেওয়া হয়। অনেক সময় মায়ের গর্ভাশয়ের মুখ খুলে যায় সময়ের পূর্বেই, তাই বেড রেস্ট দেয়া হয়। এছাড়া সার্ভিকাল পেশিগুলো ভ্রুন কে বহন করে, ফলে জরায়ুর উপর চাপ সৃষটি করে। তাই এই ক্ষেত্রে বেড রেস্ট অত্যন্ত জরুরি ।
- হাই ব্লাড প্রেশার/ প্রিঅ্যাক্লেমশিয়া বা অ্যাক্লেমশিয়াঃ গর্ভাবস্থায় অনেক সময় মা কে বেড রেস্ট দেয়া হয় যদি প্রিঅ্যাক্লেমশিয়া বা অ্যাক্লেমশিয়া থাকে।
- প্রি-একলামসিয়ার লক্ষণ-
- মাথাব্যথা করা,
- ঘাড় ব্যথা করা,
- চোখে ঝাপসা দেখা
- অথবা কোনো কারণে পুরো শরীর ফুলে যাওয়া,
- শুধু পায়ের নিচের অংশ ফুলে যাওয়া
- বাচ্চার নড়াচড়া কম হওয়া অথবা পেট আগে যেই পরিমাণ বড় ছিল, সেই তুলনায় ছোট মনে হওয়া
- হঠাৎ করে পেটে ব্যথা হওয়া ইত্যাদি প্রি-একলামসিয়ার লক্ষণ।
- অনেক সময় খিচুনি শুরু হয়ে যায়,
- তাই মায়ের উচিত ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী রেগুলার চেক আপে থাকা এবং বেড রেস্ট যদি প্রেস্ক্রাইব করা হয় তবে তা নিতে হবে। সূত্রঃ www.medscape.com
- গর্ভাবস্থায় রক্তপাতঃ গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হওয়া গর্ভাবস্থায় শারীরিক সমস্যা সমূহের মাঝে অন্যতম। গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে তাৎক্ষনিক চিকিৎসক এর শরনাপন্ন হতে হবে। অনেক সময় গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলে রোগীকে হাই রিস্ক প্রেগ্ন্যাসি বলে শনাক্ত করে মা কে বেড রেস্ট দেয়া হয়। এই নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। পূর্ন বিশ্রাম ও চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। সহবাস থেকে বিরত থাকা উত্তম। এই সময়ে রক্তপাত ঘটার সাথে সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
- গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙাঃ গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙা গর্ভাবস্থায় বেড রেস্ট এর অন্যতম কারন এটি। গর্ভাবস্থায় অ্যামনিওটিক ফ্লুইড রাপচার বা পানি ভাঙা একটি গুরুতর শারীরিক সমস্যা। গর্ভাবস্থায় যদি এমন লক্ষন দেখা দেয় বা বাচ্চা ম্যাচিওর হতে কিছুদিন বাকি থাকে , রোগীকে হাসপাতালে বেড রেস্টে রেখে বাচ্চার ম্যাচিওরিটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
- একাধিক সিজারিয়ান সেকশনঃ গর্ভাবস্থা কোন অসুস্থতা নয়। তবে বিভিন্ন শারিরীক জটিলতা ও সমস্যার জন্য মাকে বেড রেস্ট দেয়া হয়। অনেক সময় বার বার সিজারিয়ান সেকশন হয়ে থাকে। পরবর্তীকালে মাকে বেড রেস্ট কিংবা অধিকাংশ সময়ই বিশ্রাম এর পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তার।
প্রেগন্যান্সিতে ডাক্তার বেড রেস্ট নিতে বলা মানেই এই নয় আপনার গর্ভস্থ শিশু বিপদজনক অবস্থায় আছে। এইসময় বেড রেস্ট মানে আপনার অনাগত শিশুর সুস্থতা বজায় রাখা এবং একটি সুস্থ শিশু জন্ম দেয়া। বর্তমান সময়ে খাদ্যাভ্যাস, ভেজাল খাবার, শারীরিক গঠনের পরিবর্তন এর জন্য, কিংবা ফিটনেসের কারনে মায়ের শরীরের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই অনেক সময় ডঃ এরা বেড রেস্ট দিয়ে থাকেন।
বেড রেস্ট এ থাকাকালীন সমস্যাঃ
বেড রেস্ট এ থাকাকালিন মায়ের শারিরীক কিছু সমস্যা হতে পারে।
রক্ত জমাট বাধাঁঃ
গর্ভবতী মা একটানা শুয়ে থাকার কারনে পা এর নড়াচড়া কিংবা পায়ের ব্যবহার কমে যায়। পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। এই সমস্যা ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস ((venous thromboembolism) ) বলে।
জয়েন্ট পেশিতে ব্যাথাঃ
গর্ভাবস্থায় যখন বেড রেস্ট অবশ্যম্ভাবী, তখন পেশি অব্যবহৃত থাকে। ফলে এইসব পেশি, লিগামেন্ট কিংবা জয়েন্ট এ জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ
বেড রেস্ট এর জন্য যেহেতু স্বাভাবিকভাবেই নড়া চড়া হচ্ছে না। এতে গর্ভাবস্থায় মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। তাই খাদ্যাভ্যাস এবং চিকিৎসক এর পরামর্শ অনুযায়ী মেডিসিন গ্রহন করতে হবে।
হতাশা ও ডিপ্রেশনঃ
স্বাভাবিক মানুষ যখন বিশ্রামে থাকেন তখন মানুষের মন অশান্ত হয়ে যায় ৷ সেখানে একজন হবু মা এর শরীরে আরেকটি প্রান ৷ মানসিক এবং নিজস্ব শরীরের যন্ত্রনা, তখন মা হতাশ হয়ে পড়েন। এই জন্য মা নিজেকে ব্যস্ত রাখতে
বই, মুভি, প্রার্থনা, বা শুয়ে করা যায় এমন কিছু কাজে ব্যস্ত রাখতে পারেন।
মায়ের জন্য টিপসঃ
- সুষম খাবার খান
- মশলা জাতিয় খাবার এড়িয়ে চলুন
- পানি পানে সচেতন হন
- যোগ ব্যায়াম, শ্বাসতন্ত্রের ব্যায়াম কিংবা হাল্কা ভাবে পা ঘুরিয়ে নাড়া চাড়া করুন।
- হতাশা কিংবা এক ঘেয়েমি কাটাতে মেডিটেশিন করুন।
- নিজ ধর্মের ধর্মীয় বই পড়ুন।
- জানুন, জানার জন্য বই, ইন্টারনেট কিংবা ম্যাগাজিন পড়ুন।
মা হিসেবে নয় মাসের যাত্রাকে সুন্দর ভাবে এগিয়ে নিতে আপনার জন্য শুভ কামনা। বিভিন্ন তথ্য রিসার্চ করে আপনাদের সহোযোগিতা করতে Pawkythings.com চেস্টা করে যাচ্ছে।
সূত্রঃ
- www.webmed.com
- www.npr.org
- www.mayoclinic.org
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।