আর্টিকেলটিতে যা থাকছে -
নবজাতকের ঘুম নিয়ে নতুন মা বাবা বা পরিবার এর সবাই অনেক চিন্তায় থাকেন। নবজাতকের ঘুমের সময়সূচী রুটিন মাফিক করা খুবই কস্টের কাজ। নবজাতকের লালন পালন এর মাঝে নবজাতকের ঘুম মা বাবার কাছে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।
নবজাতক বা নিউবর্ন বেবি রুটিন মাফিক ঘুমায় না। তাই তারা প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে না ও ঘুমাতে পারে। নবজাতক শিশু দিনে ৮-৯ ঘন্টা ও রাতে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে পারে। অধিকাংশ শিশু রাতে ঘুমায়।
নিউবর্ন বেবিদের মাঝে দুই তৃতীয়াংশ শিশু রাতে ঘুমায় না।। কিছুক্ষন পর পর জেগে উঠে। ধীরে ধীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার ঘুমের সময়ের উন্নতি হয়।। নবজাতকের কিছু সাধারন সমস্যার মাঝে এই ঘুম ও সদ্য মা বাবার কাছে একটু পীড়াদায়ক। তাই নবজাতকের ঘুমের সময়সূচী জানাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নবজাতকের ঘুমের সময়সূচিঃ
শিশুর বয়স | ঘুমানোর সময় (দিনে) | ঘুমানোর সময় (রাতে) | ন্যাপ | মোট সময় |
---|---|---|---|---|
নবজাতক | ৮-৯ ঘণ্টা | ৮-৯ ঘণ্টা | ৪-৫ বার | ১৮-১৯ ঘণ্টা |
১ মাস | ৭-৮ ঘণ্টা | ৮-৯ ঘণ্টা | ৩/৪ বার | ১৮-১৬ ঘণ্টা |
৩ মাস | ৪-৫ ঘণ্টা | ৭-৮ ঘণ্টা | ৩/৪ বার | ১৪-১৫ ঘণ্টা |
৬ মাস | ৩-৪ ঘণ্টা | ১০-১১ ঘণ্টা | ৩ বার | ১৪-১৫ ঘণ্টা |
৯ মাস | ২-৩ ঘণ্টা | ৯-১০ ঘণ্টা | ২ বার | ১২-১৩ ঘণ্টা |
১২ মাস বা ১ বছর | ১.৫-২ ঘণ্টা | ১০-১১ ঘণ্টা | ১ বার | ১২-১৩ ঘণ্টা |
নবজাতকের ঘুমের সময়সূচী:
- নিউবর্ন বা নবজাতক মোট ঘুমাতে পারে ১৬-১৭ ঘন্টা।
- কিছু কিছু নবজাতক ১৮-১৯ ঘন্টা ও ঘুমাতে পারে।
- দিনে ৮ ঘন্টা এবং রাতে ৮-৯ ঘন্টা।
- নবজাতক সাধারনত সারা দিন রাত ঘুমিয়ে কাটায় কিন্তু এদের ঘুম একটানা হয় না। ৩০মিনিট থেকে ২-৩ ঘন্টা স্থায়ী হতে পারে।
১ মাস বয়সী শিশুর ঘুমের সময়ঃ
- ১ মাস বয়সী নবজাতক মোট ঘুমায় ১৪-১৬ ঘন্টা।।
- ৭-৮ ঘন্টা ঘুমায় দিনে কিন্তু একটানা ঘুমায় না।
- রাতে ৮-৯ ঘন্টা।
- দিনে এরা ৩-৪ বার ঘুমাবে-উঠবে।। অর্থাৎ ন্যাপ নিবে কয়েকবার। ন্যাপ নেয়ার টাইম ১- ৩ ঘন্টা
৩ মাস বয়সী শিশুর ঘুমের সময়ঃ
- ৩ মাস বয়সী নবজাতকের মোট ঘুমের পরিমান ১৪- ১৫ ঘন্টা।
- দিনে এরা ৪-৫ ঘন্টা আর রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমায়।
- এরাও ন্যাপ নিবে দিনে তিন বার। ৪৫ মিনিট থেকে ৩ ঘন্টা বিরতি বিহীন ঘুমায়। এর পর কিছুক্ষন জাগবে।। আবার ঘুমাবে।
৬ মাস বয়সী শিশুর ঘুমের সময়ঃ
- ৬ মাস বয়সী নবজাতকের ঘুমের সময় মোট ১৪-১৫ ঘন্টা হতে পারে।।
- দিনে ৩-৪ ঘন্টা রাতে ১০-১১ ঘন্টা
- দিনে এই সময় বাচ্চা কম ঘুমাবে। রাতে বেশি ঘুমাবে। দিনে ৪০ মিনিট থেকে ২ ঘন্টা বা তার কম বেশি ঘুমাতে পারে। তবে এই সময় দিনের ঘুম একটানা হয় না।। রাতে একটানা ঘুমায়।
- দিনে ন্যাপ নেয় তিনবার৷ অর্থাৎ বাচ্চারা তিনবার ঘুমাবে, আবার জেগে থাকবে।
৯ মাস বয়সী শিশুর ঘুমের সময়ঃ
- ৯ মাস বয়সী বাচ্চা ১৩-১৪ ঘন্টা ঘুমায়।
- দিনে ঘুমাবে ২-৩ ঘন্টা।। রাতে ১১ ঘন্টা।
- এই বয়সী বাচ্চা দিনে ১ ঘন্টা করে দুইবার ঘুমাতে পারে।
১২ মাস বা ১ বছর শিশুর ঘুমের সময়ঃ
- ১২ মাস বয়সী বাচ্চা দিনে ঘুমাবে ২-৩ ঘন্টা।
- রাতে ঘুমায় ১০-১১ ঘন্টা।
- দিনে একবার ঘুমাবে।
নবজাতকের ঘুমের প্রকৃতিঃ
নবজাতকের ঘুমের প্রকৃতি অনেকটা অনির্দিষ্ট। নবজাতক কতক্ষন ঘুমাবে তা বলা যায় না। উপরের তথ্য অনুযায়ী ঘুমের একটি ধারণা পাওয়া যায়। কেননা সব নবজাতক একই নিয়মে চলে না।
বিশেষত নবজাতক একটানা ঘুমায় না।। বার বার জেগে উঠে।। একবার জাগে একবার ঘুমায়। নবজাতক এর ঘুমের সময় কে এমন ভাবে ভাগ করা যায় যার মাঝে অর্ধেক সময় সক্রিয় ঘুম আর বাকিটা তন্দ্রাচ্ছন্ন বা Rapid Eye Movement (REM) ঘুম। এইঘুমের সময় গুলো হয় অল্প আকৃতির। এর অর্থ হলো ঘুম টা খুব হালকা।হয়।। আর বাচ্চা প্রায়ই চোখ না খুলে চোখের বল কে নাড়ায়। নবজাতকের ঘুম এরকম হালকা-গাঢ় ভাবে আবর্তিত হতে থাকে। ছয় মাস হলে ধীরে ধীরে ঘুমের পরিধি বাড়ে এবং গাঢ় ঘুম হয়ে থাকে।
নবজাতক কে কি ঘুমের মাঝে খাওয়ানো উচিতঃ জন্মের একদম প্রথম সপ্তাহ ও দ্বিতীয় সপ্তাহের মাঝে শিশুর খাওয়ার পরিমাণ কম থাকে। বেশির ভাগ শিশুই ঘুমিয়ে কাটায়।।এজন্য যখন শিশু একটু সজাগ হয় বা কান্না করে তখন খাওয়ানো উচিত। শিশু যদি অনেক্ষন না খেয়ে একটানা ঘুমায় তবে শিশুকে খাওয়নোর চেষ্টা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ঘুম থেকে জাগিয়ে খাওয়ানো উচিত। নবজাতক ২-৩ ঘন্টা পর খাবে। অধিকাংশ শিশু নিজেই জেগে উঠে বা কান্না করে ঘুম থেকে ক্ষুধার্ত হলে।
- ৪-৫ ঘন্টা পর নিজেই জেগে উঠে খাওয়ার জন্য।। কান্না করে বা মোচড়ায় নবজাতক।
- বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চা ঘন ঘন দুধ খেতে চাইবে। ফর্মুলা দুধ খাওয়া শিশু ঘন ঘন খেতে চায় না। ৮-১২বার ফিডার খেতে খেতে পারে।
নবজাতকের ঘুমের সময়কে কিভাবে রুটিনমাফিক করা যায়?
নবজাতকের ঘুমের সময়কে রুটিন মাফিক করা যায়। তবে তা কষ্টসাধ্য। প্রথম সপ্তাহে অন্তত শিডিউলে আনা যাবে না। পরের সপ্তাহ থেকে ধীরে ধীরে কিছু নিয়ম অনুসরণ করলে রুটিন করা যেতে পারে। ঘুম এবং খাবার সময়কে রুটিনে আনার জন্য মা কিছু নিয়ম অনুসরণ করতেন পারেন। দিনের বেলায় কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।
- নবজাতকের শরীর থেকে কিছু কাপড় বা জামা খুলে দিলে নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রার পরিবর্তন হবে। একটু কম উষ্ণ লাগবে শিশু তখন জেগে যেতে পারে।
- উষ্ণ পানিতে রুমাল ভিজিয়ে শিশুর গাল এ হালকা মুছে দিলে শিশু জেগে উঠতে পারে, না উঠলেও শিশুর নড়াচড়া হবে।। সেময় শিশুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে সজাগ রাখার চেষ্টা করা যেতে পারে।
- অনেক্ষন ঘুমানোর জন্য শিশু ক্লান্ত হয়ে থাকে,তাই খুদার চাহিদা থাকে না। তাই শিশুকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ক্লান্ত হতে দেয়া যাবে না।
- শিশুর গোসল, ব্যায়াম ও ম্যাসাজ এর সময় রুটিন করে শিশুকে জাগানো রাখতে পারেন।
- শিশুকে দিনের আলোতে নিয়ে হাঁটবেন। চোখে আলো পড়লে জাগতে পারে।।
দিনের বেলায় এগুলো করতে পারেন। দিনে জাগলে তাহলে রাতে শিশু কম জাগতে পারে। কলিক শিশুরা রাতে কান্না করে সজাগ থাকে।
শিশুরা কি দিন আর রাতে পার্থক্য বুঝতে পারে?
না, প্রথম মাসে শিশুরা দিন আর রাতে পার্থক্য বুঝতে পারে না। তিন মাস হলে ধীরে ধীরে মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদন হয়, এটি ঘুম আসা বা ঘুম থেকে উঠাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর ৫-৬ মাসে শিশুর মাঝে শিশুর ঘুমের সময়ানুবর্তিতা গড়ে উঠে।। বেশিরভাগ শিশুই রাতে ঘুমায়।।
আর এক শতাংশ নিউবর্ন সময়ের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে সজাগ থাকে রাতে বা কান্না করে। মা বাবাকে অত্যন্ত ধৈর্য্য এর সাথে এই সময় পার করতে হবে।
নিউবর্ন/ নবজাতক কি অতিরিক্ত ঘুমায়?
কিছু কিছু নবজাতক অতিরিক্ত ঘুমায়।। এজন্য মা দুশ্চিন্তা করেন। অনেক নবজাতক অতিরিক্ত ঘুমাতে পারে। সেজন্য নবজাতকের ডায়পার বা প্রস্রাব এর পরিমান খেয়াল করতে হবে। শিশু যেন ডিহাইড্রাইড না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ঘুমের মাঝে শিশুকে তিন ঘন্টা পর খাওয়াতে হবে। শিশুর সুস্থ ও হেলদি হলে ঘুমানো স্বাভাবিক।
নবজাতক না ঘুমালে কি করনীয়ঃ
নবজাতক যদি কলিক বেবি হয় তবে অনেক নবজাতক না ঘুমিয়ে কান্না করে।।এতে মা ও শিশুর ক্ষতি হয়।।ক্লান্ত বোধ হতে পারে।
মা যদি শিশুর এই অবস্থা অনুভব করেন পেডিয়াট্রিক / শিশু বিশেষজ্ঞ এর সাহায্য নিতে পারেন। খুব মৃদু ঘুমের ওষুধ দেয়া হয় এ ক্ষেত্রে।