ভিটামিন ডি এর গুরুত্ব একজন মানুষের শরীরে জরুরী। বর্তমান সময়ে সাধারন মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা যাচ্ছে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে ভিটামিন ডি-এর উপকারিতা অনেক।
বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই ভিটামিন ডি এর ঘাটতি ভুগছেন। ভিটামিন ডি এমন একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। এটির ঘাটতির ক্ষতিকর প্রভাব তাৎক্ষনিক দেখা না গেলেও পরবর্তীতে এর প্রভাব দেখা দেয় । ভিটামিন ডি এর অভাবে শরীরে বিভিন্ন রোগ সমস্যা দেখা দেয়।
ভিটামিন ডি এর অভাবে দেহে যেসব সমস্যা হয়ঃ
ভিটামিন ডি-এর অভাব বা ভিটামিন ডির ঘাটতি হলে কী সমস্যা হয়? অকারণে ক্লান্তিভাব, ঝিমুনি এবং শুয়ে বসে থাকার ইচ্ছে হতে পারে শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাবে।
বিষন্নতাঃ
ভিটামিন ডি এর অভাব বাড়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। ভিটামিন ডি দেহের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি এত গুরুত্বপূর্ণ তা মানুষ আগে বুঝতে পারে নি। বর্তমানে চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেই দেখা যাচ্ছে রোগীর শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব। মানবদেহে ভিটামিন এর প্রয়োজনীয়তা কত তা আমরা ছোট বেলায় বইতে পড়েছি। কিন্তু ভিটামিন এর অভাবে এত রোগ তা হয়তো পাত্তা দেয়া হয়ে উঠেনি। বিষন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক সমস্যা ভিটামিন ডির ঘাটতির একটি লক্ষণ।।
- মানসিক দুশ্চিন্তা,
- ক্লান্তি, অবসাদগ্রস্ত ,যাদের রক্তে ভিটামিন ডি অপর্যাপ্ত থাকে তারা একটুতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
- কিংবা অনিয়ন্ত্রিত আবেগ
- কাজে অনিহা
- সারাদিন ঝিমানো বা ঘুম ঘুম ভাব
- মনোযোগ এর অভাব
- এগুলো ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত কারনে হতে পারে।
ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড় ক্ষয়ঃ
ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দেয় অনেকের শরীরেই। বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবে হাড় ক্ষয় হতে পারে। এর মাঝে হাড় ক্ষয় হওয়া ভিটামিন ডি এর অভাবের লক্ষন। ভিটামিন ডি দেহের হাঁড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি সরাসরি হাড় গঠনে কাজ করে না। হাড় গঠনে কাজ করে ক্যালসিয়াম। আর সে ক্যালসিয়াম শোষন করে কাজে লাগায় ভিটামিন ডি। ভিটামিন ডি এর অভাবে তাই এসব রোগ হয়। ভিটামিন ডি এর অভাবে দীর্ঘদিন হাড়ের ব্যথা বা অস্টিওম্যালেসিয়া নামক হাড়ের রোগ হয়। বয়স বাড়তে থাকলে ত্বকের ভিটামিন ডি তৈরি করার ক্ষমতা কমতে থাকে। এছাড়া ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড়ের ব্যথা, পেশি দুর্বল হয়ে পড়া ইত্যাদি সমস্যা হয়। ভিটামিন ডি এর জন্য হাড়ের ব্যাথার পাশাপাশি কোমরে ব্যাথা ও হয়।
দাঁত এর ক্ষয় কিংবা অকালে দাঁত পড়ে যাওয়াঃ
ভিটামিন ডি এমন একটি প্রয়োজনীয় উপাদান শরীর এর জন্য যার উপকার বলে শেষ করা যাবে না। আপনার শরীরে ভিটামিন-ডি এর অভাব ঘটেছে ?
- অকালে দাঁত পড়ে যেতে পারে,
- কিংবা দাঁত এর ক্ষয় হয় ভিটামিন ডি এর অভাবে।
- দাঁতএর গঠন এ বাধাগ্রস্ত হয় এর অভাবে,
- অনেক সময় শিশুদের দাতঁ দেরিতে উঠে ভিড়ামিন ডি এর অভাবে। মজবুত এবং সুস্থ মাড়ির জন্য ভিটামিন-ডি প্রয়োজন।
- ভিটামিন-ডি মাড়ির রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- ভিটামিন-ডি দাঁতের মিনারেলের উন্নতি ঘটায় এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।
ভিটামিন ডি এর অভাবে মাংস পেশীর ব্যাথাঃ
শরীরের জন্য অপরিহার্য ভিটামিন ডি। বিশেষত উরু, শ্রোণী এবং হিপের হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে ভিটামিন ডি এর অভাবে। আঘাত সারতে অনেক সময় নেয় ভিটামিন ডি এর অভাবে। ভিটামিন ডি-র ঘাটতিতে খুব দ্রুত কোনো শারীরিক লক্ষণ দেখা দেবে না। যদি নিয়মিত শরীরে হাড় বা পিঠে ব্যথা বোধ করেন, তাহলে ৮০% বোঝা যায় এটা ভিটামিন-ডি’র অভাবের কারণে ঘটতে পারে
ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের রোগ হয়ঃ
ভিটামিন ডি এমন একটি উপাদান যা বড়দের মত শিশুর শরীরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি এবং মানসিক বৃদ্ধি খুব দ্রুত হয় তাই শিশুদের জন্য এই ভিটামিন আরো গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি নানা উপসর্গের মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়।
- ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুদের বাড়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
- ওজন কম হওয়া
- দাত দেরিতে উঠা
- খিটখিটে ভাব বা বিরক্ত করা
- শিশুদেরমধ্যে খিঁচুনির অন্যতম কারণ হল ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি
- ঘুম কম হওয়া
- রিকেট রোগ হয়ে থাকে
- ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে শিশুদের শ্বাসকষ্ট হয়। শিশুরা অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
- মাংসপেশি দুর্বল হয়ে থাকে।
ভিটামিন ডি এর জন্য উল্লেখিত সমস্যা পরিলক্ষিত হয় শিশুদের।
ভিটামিন ডি এর ঘাটতি প্রতিরোধে কি করনীয়ঃ
ভিটামিন ডি ঘাটতি প্রতিরোধে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। যেমন সূর্যের আলো কখন রোদে লাগাবেন কিংবা খাদ্যাভ্যাস কিভাবে মেনে চলবেন এই ব্যাপারগুলো খুব গুরত্বপূর্ণ।
ভিটামিন ডি পেতে কতটুকু সূর্যের আলো প্রয়োজন?
ভিটামিন ডি পেতে সূর্যের আলো গায়ে লাগানো নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। কেউ বলে দুপুরের রোদ এর রস্মি ক্ষতিকর। কেউ বলে অধিক সূর্যালোকে ক্যান্সার হতে পারে। কেউ বা বলে কালো হয়ে যায় ত্বক পুড়ে যায়। তাই সঠিক পদ্ধতি জেনে অবশ্যই রোদ লাগানো উচিত। কারন অতিরিক্ত সূর্যরশ্মি শরীরের জন্য ক্ষতিকর বলা হয়৷ কিন্তু প্রয়োজনীয় সূর্যরশ্মি শরীরে না লাগালে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা যায়।
ভৌগলিক ভাবে বাংলাদেশের অবস্থান অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ দের মতে সকাল ১০-দুপুর ৩ টা পর্যন্ত ভিটামিন ডি পাওয়ার উপযুক্ত সময়। তার মানে এই নয় সারাদিন রোদে থাকতে হবে। একজন মানুষের সারাদিনে ৩০ মিনিট রোদ লাগানো যথেষ্ট। এই সময়ের মাঝে একজন মানুষ তার সহনীয় পর্যায়ে হাটাহাটি করে রোদ লাগাতে পারেন। বিশেষজ্ঞ দের মতানুসারে দেখা যায় যার শরীরে মেলানিন এর আধিক্য বেশি তার শরীরে অতিবেগুনি রস্মি প্রবেশে তত বাঁধাগ্রস্থ হয়। তাই ফর্সা কিংবা উজ্জ্বল রঙ এর চেয়ে ডার্ক কিংবা কৃষ্ণ বর্ণের গায়ের রঙ এর মানুষের রোদে একটু বেশি সময় থাকতে হবে।
রোদের অনেকের এলার্জি, বলিরেখা এবং ত্বকে টান সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিতে পারেন। চাইলে দুপুরের কড়া রোদ এড়িয়ে যেতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ
টিনেজ মেয়েদের খাদ্যপুষ্টি ও গাইডলাইন |
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে লেবুর উপকারিতা |
অতিরিক্ত ভিটামিন ডি এর প্রভাবঃ
অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়। মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন ডি, বিশেষ করে কোলেক্যালসিফেরল রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। ভিটামিন-ডি এর প্রভাবঃ
- ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে যাবে
- পাচন প্রক্রিয়াতে সমস্যা
- কিডনিতে পাথর হতে পারে
- পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে
- অত্যধিক পরিমাণে ভিটামিন ডি গ্রহণে হাইপারক্যালসেমিয়া (লক্ষণ পেশির ব্যথা, পেশির দুর্বলতা এবং চরম ক্লান্তি এবং তৃষ্ণা)
- সূর্যরশ্মি ভিটামিন ডি তৈরি করতে যেমন সহায়ক, তেমনই অতিরিক্ত ভিটামিন ডি ধ্বংস করতে ভূমিকা রাখে।
যেসব খাদ্য থেকে ভিটামিন ডি সংগ্রহ করা যেতে পারেঃ

ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন কে দ্রবীভূত করে। তাই যেসব খাবারে এইসব উপাদান রয়েছে সে-ধরনের খাবার গ্রহন করা উচিত। তাই ভিটামিন ডি পাওয়া যেতে পারে যে-সব খাবারে তা হলঃ
- মাশরুম
- ডিম
- গরুর কলিজা
- তৈলাক্ত মাছ, যেমন কড বা হাঙর মাছের যকৃতের তেল
- ডিমের কুসুম, মাখন ও চর্বিযুক্ত খাদ্যে ভিটামিন ডি থাকে
- বাজারের বেশ কিছু ফর্টিফাইড খাবার উৎপাদনকারী তাদের ফর্টিফাইড খাবারে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যোগ করে।
- ওটস
- পনির
- শুকনো ফল: বাদাম, আখরোটসহ বিভিন্ন ধরনের শুকনো ফল ভিটামিন ডি এর ভালো উৎস। প্রতিদিন একমুঠো বাদাম খেতে পারেন যা শরীরের ভিটামিন ডি চাহিদা পূরণ করবে
ভিটামিন ডি এর ডোজ

শরীরের প্রয়োজন ও চাহিদার উপর ভিটামিন ডি এর ডোজ নির্ভর করে। মেডিসিন ইনস্টিটিউটের গাইডলাইন অনুযায়ী ১-৭০ বছর এর মানুষের জন্য ৬০০আইইউ নির্ধারন করেছেন। প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ১০০০- ৪,০০০ পর্যন্ত নির্ধারণ করতে পারেন চিকিৎসক এরা। নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রায় প্রয়োজন হতে পারে। ভিটামিন ডি দুই ধরনের সাপ্লিমেন্ট থেকে পাওয়া যায়।
- ভিটামিন ডি ২
- ভিটামিন ডি ৩
- কিন্তু ভিটামিন ডি ২ শরীর নিজেই তৈরি করতে পারে । তাই ভিটামিন ডি ৩ গ্রহন করা উচিত।
- ভিটামিন ডি ঘাটতি পূরনে প্রতি সপ্তাহে ৪০০০০ আইইউ ৭ সপ্তাহ পর্যন্ত গ্রহন করতে হবে।
- ভিটামিন ডি৩ এর ঘাটতি প্রতিরোধে প্রতি ৪ সপ্তাহে ২০০০০ আইইউ করে সেবন করতে হবে। পরবর্তী তে পরীক্ষা করে চিকিৎসক এর দ্বারা আবার ডোজ সেট করে নিতে হবে ।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।