আর্টিকেলটিতে যা থাকছে -
৫-৭ মাস বয়সী শিশুর খাবার চার্ট নিয়ে মায়েরা চিন্তিত থাকেন। শিশু সলিড শিশুর শুরু করার জন্য মায়েরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। শিশুর খাবার শুরু করার জন্য শিশুর শারীরিক উন্নয়নের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে শিশুর সলিড শুরু করার মানে এই নয় সে শুধু সলিড খাবে । এই সময়টাতে শিশুর প্রধান খাবার হবে বুকের দুধ।
৫-৭ মাস বয়সী শিশুর খাবার রেসিপি শিশুর খাবার রেসিপি, চার্ট বা শিশুর সলিড নিয়ে মায়ের অনেক ভাবনায় থাকেন, কি দিয়ে শুরু করবেন আপনার শিশুর খাবার। কিসে আছে পুষ্টি? কোন খাবারটি সোনামনির মুখরোচক হবে। চিন্তার শেষ নেই মায়ের। ৫-৭ মাস বয়সী শিশুর খাবার পরিচয় করানোর জন্য কিছু সলিড দেয়া হল।
৫-৭ মাস বয়সী শিশুর খাবার চার্ট
৫-৭ মাস বয়সী শিশুর খাবার পরিচয় করানোর জন্য কিছু সলিড চার্ট দেয়া হল: মিড মর্নিং বেলাঃ ১০-১১ | দুপুর বেলাঃ ২-৩ |
---|---|
মিস্টি আলু পিউরি | জাউ |
আপেল পিউরি | স্যুপ |
কলা ম্যাশ | সুজি |
পাকা আম পিউরি | আলু পিউরি |
চীজ | ডাল চাল খিচুড়ি |
গাজর পিউরি | চটকানো ভাত |
- মিস্টি আলু পিউরিঃ ৫-৭ মাস বয়সী শিশুর খাবার চার্ট এর মাঝে মিস্টি আলু অন্যতম। মিস্টি আলু সিদ্ধ করে চামড়া ছিলে একটু পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে চুলায় হালকা জ্বাল দিয়ে একটু দুধ এর চেয়ে ভারী কিন্তু অনেক ভারি নয়, আংগুল দিয়ে উঠিয়ে ঘনত্ব দেখবেন। লক্ষ্য করবেন যেন আলুর কোন চাক অবশিষ্ট না থাকে। মিষ্টি আলুতে উচ্চ মাত্রায় ‘ভিটামিন এ’ থাকে। ‘ভিটামিন এ’ হচ্ছে একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে।
মিষ্টি আলুতে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬সহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। যা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি দৃষ্টিশক্তি সুরক্ষিত রাখে।
- গাজর পিউরিঃ গাজর পিউরি শিশুর জন্য অনেক উপকারি। এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। হাড়ের রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।এতে রয়েছে ভিটামিন এ।ভিটামিন-এ আমাদের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা করে। গাজর ক্যারোটিনের রাজা, যা ভিটামিন-এ’র উৎস। গাজরের বিটা ক্যারোটিন নিজে নিজেই ভিটামিন-এ’তে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া এতে খনিজ পদার্থ,ক্যালসিয়াম,ফসফরাস,লৌহ,ক্যারোটিন,ভিটামিন বি,ভিটামিন সি রয়েছে।
- আপেল পিউরিঃ আপেল চামড়া ছাড়িয়ে সিদ্ধ করে ব্লেন্ড করে দিতে পারেন। চেস্টা করবেন মিস্টি আপেল দিতে।। টক আপেল হলে শিশু খেতে চাইবে না। আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, বি কমপ্লেক্স রয়েছে। এই ভিটামিনের কাজ হল শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা সৃষ্টি করা। আপেলের মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম। এছাড়া আপেলের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণে রয়েছে ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন ই, ফসফরাস, ভিটামিন বি সিক্স, ভিটামিন কে, আয়রন, সোডিয়াম, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট।
- কলাঃ ৫-৭ মাস বয়সী শিশুর খাবার চার্ট এর মাঝে পাকা কলা অন্যতম । পাকা কলা চটকে বা কাটা চামচ দিয়ে ম্যাশ করে শিশুকে দিবেন।। শিশু যদি খেতে পছন্দ করে তবে দিন। শিশুর যদি খাবার পছন্দ না করে তবে তা জোর করে খাওয়াবেন না।।
কলার মধ্যে রয়েছে শর্করা, আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ লবণ। কলায় যথেষ্ট আঁশ আছে। খনিজ লবনের মধ্য আছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ। কলায় ভিটামিন এ, বি ও কিছু ভিটামিন-সি আছে। কলা লৌহ রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরীতে কাজে লাগে। কলা তাই রক্তশূন্যতায় ও উপকারী। - পাকা আমঃ ৫-৭ মাস বয়সী শিশুর খাবার চার্ট এর মাঝে পাকা আম অন্যতম । পাকা আম এর সিজন হলে তো কথাই নেই। আমটি খোসা ছাড়িয়ে পাল্পটি বের করে ম্যাশ করে প্রথমে রস দিতে পারেন। এভাবে ধীরে ধীরে পাল্প টি হাতে মিশিয়ে পিউরি করে দিতে পারেন। ভিটামিন এ, বি, সি, ই সমৃদ্ধ পাকা আম শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। এই ফলে ২০ ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। আমে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন থাকে, যা ভিটামিন এ এর উৎস । আমে প্রচুর পটাশিয়াম ,ভিটামিন এ এবং ডি আছে , ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম ও ফলিক অ্যাসিড থাকে। আমে প্রচুর আঁশ থাকে, হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এই ফল। পাকা আম কোষ্ঠকাঠিন্যে সৃষ্টি করে না
- জাউঃ ৫-৭ মাস বয়সী শিশুর খাবার চার্ট এর মাঝে জাউ অন্যতম । ভাত এর চাল কে সিদ্ধ করে একদম নরম করে জাউ করে ফেলবেন। মাঝে মাঝে পোলাওর চাল কে সিদ্ধ করে জাউ করে ফেলবেন। পোলাও এর চাল নিয়মিত দিবেন না।। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। খাবারের ঘনত্ব অবশ্যই দেখে নিবেন।
- স্যুপঃ পুষ্টি, খনিজ, ভিটামিন, শক্তির পাওয়ার বুলেট স্যুপ দুর্দান্ত খাবার। চিকেন ও ডিম দিয়ে স্যুপ করে তরলটি শিশুকে দিবেন।। শিশু পছন্দ করবে। হচ্ছে তরল শিশুকে হাইড্রেট করে। স্যুপ একটু শক্তিবর্ধক খাবার। কোন শিশুর যদি ধরা যাক ঠান্ডা সর্দি কাশি হয়েছে তাহলে স্যুপ তার জন্য অনেকটা আরামদায়ক হয়ে থাকে । আবার এটি শরীরকে এনার্জি দেয়।
- সুজিঃ সুজি দিতে পারেন তবে নিয়মিত বেসিসে নয়। সুজি বানানোর পর ফর্মুলা মিল্ক যোগ করবেন। ফর্মুলা মিল্ক জ্বাল দেয়া যায় না। তাই চুলায় জ্বাল দিবেন না। সুজির উপকারিতা অনেক। সুজি আয়রন এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ। এটি খাওয়া এবং হজম করা সহজ। এটি খেলে শিশুর মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য সম্পর্কিত সমস্যা হয় না। সুজি শরীরের হিমোগ্লোবিন মাত্রা বাড়ায় । কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন বি এবং ভিটামিন ই সহ সুজিতে প্রোটিনগুলির উপস্থিতির কারণে এটিকে সমস্ত জায়গায় পুষ্টিকর হিসাবে পছন্দ করা হয় । ডিম, ফল এবং দুধের সাথে রান্না করলে সুজিকে পুষ্টিকর খাবারের উৎস হবে।
- আলুঃ সাধারন গোল আলু সিদ্ধ করে ব্লেন্ড করে চুলায় আলু পিউরিটি (ঐচ্ছিক একচিমটি লবন) দিয়ে একটু জ্বাল দিয়ে রান্না করে নিবেন। একদম পাতলা নয়, এর থেকে ভারি ঘনত্বে নিবেন শিশুর খাবার মিশ্রনটি।
- ডাল চাল খিচুড়িঃ ডাল ও চাল এবং একটি সবজি ( মিস্টি কুমড়া, লাউ, পেপে, আলু) দিয়ে খিচুড়ি করতে হবে। কয়েকদিন যাওয়ার পর পরিমাণমত রসুন, তেল, লবন, তেজপাতা যোগ করে খিচুড়ি রান্না করতে পারেন। ধীরে ধীরে একটু মুরগির পিস বা মাছ যোগ করবেন। ডাল এ প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, ফাইবার, পটাশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি১ রয়েছে। খাবারেরক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন এ, ডি, এবং কে এর উৎস। এটি শিশুদের স্বাস্থ্যকর হাড়ের বিকাশে এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। অনেক সময় বাচ্চাদের ডাল হজমে সমস্যা হয়। তাই যদি ডাল খাবার এ যোগ করার পর বাচ্চার পায়খানার ধরন বা গ্যাস হয় তবে ডাল এড়িয়ে যাবেন।
- চটকানো ভাতঃ ৫-৭ মাস বয়সী শিশুকে ভাত নরম করে চটকে দিতে পারেন। এছাড়া চাইলে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে একটু নরম পেস্ট করে দিতে পারেন।
- চীজঃ শিশুর খাদ্যতালিকায় চীজ যোগ করতে পারেন। ৫-৬ মাসের শিশুকে সপ্তাহে ২-৩ দিন চীজ দিতে পারেন। ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ, ডি, এবং কে এর উৎস চীজ । এটি শিশুদের স্বাস্থ্যকর হাড়ের বিকাশে এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। চীজ ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম এবং মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। শিশুর সলিড শুরু করার পর থেকে ৫-৭ মাস বয়সী শিশুর খাবার নির্ধারণ করা একটু কষ্টসাধ্য। তাই মায়ের উচিত সচেতনভাবে বিভিন্ন ধরনের খাবার দিয়ে শিশুর খাবার রুচি বা টেস্টবাড পরখ করে শিশুকে খাবার দেয়া।
টিপস:
- ৫-৭ মাস বয়সী শিশুর খাবার চার্ট হবে এমন যেন দিনে দুইবার সলিড থাকে, এর বেশি নয়। কেননা এই সময়ে শিশুর ইমিউনিটি খুব দুর্বল ।
- এবাচ্চাদের খাবার দেওয়ার সাথে বাচ্চার পায়খানা খেয়াল করবেন পায়খানা কোন সমস্যা হলে অবশ্যই খাবারটি বন্ধ করবেন।
- ৫-৭ মাস বয়সী শিশুর খাবার শুরু হতে পারে পরিজ কিংবা পিউরি জাতীয় খাবার দিয়ে
- ৫-৭ মাস বয়সী শিশুর আহারযোগ্য খাবার পাতলা থেকে একটু ঘন ঘনত্বের খাবার হবে
- শিশুর খাবার সময় একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করা উচিত
- বাচ্চাদের খাবার পরিবর্তন করে দেওয়া উচিত এতে একঘেয়েমি সৃষ্টি হবে না
- খাবার শুরু করার পর খাবারে শিশুর অ্যালার্জি হয় কিনা কিংবা খাবার হজমের সমস্যা হচ্ছে কি না সে দিকে লক্ষ্য করবেন, এলার্জি হচ্ছে কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যাবে-
- ডায়রিয়া
- বমি
- অনবরত কান্না
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- র্যাশ
সতর্কতাঃ
- মনে রাখবেন শিশু খেতে না চাইলে জোর করে খাওয়ানো চেষ্টা করবেন না। ৫-৭ মাস বয়সী শিশুর খাবার চার্টগুলো শিশুকে খাবার পরিচয় বা উইনিং এর জন্য এভাবে চেষ্টা করতে পারেন কিন্তু না খেলে অবশ্যই জোর করে খাওয়ানো যাবে না। শিশুকে ব্লেন্ড করা খাবার দেয়া যাবে না, তা ভাববেন না। শিশু খাবার খাওয়া শুরু করলে বা অভ্যস্ত হতে শুরু করলে আপনি ব্লেন্ড করা খাবার থেকে সরে আসবেন। একটু দানাদার খাবারে মুভ করবেন। লক্ষ্য রাখবেন আপনার শিশু কেমন খাবার পছন্দ করে। শিশু বাটিভর্তি খাবে এমনটা আশা না করাই বাঞ্চনীয়। ৫-৭ মাস বয়সী শিশুর খাবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত জোর করে খাওয়ানো হলে শিশু বমি করে দিবে। শিশু একটি খাবার পছন্দ না করলে নতুন আরেকটি খাবার চেষ্টা করুন । কয়েকদিন কেটে যাওয়ার পরে আবার সেই খাবারটি চেষ্টা করে দেখুন।
- এছাড়াও যদি মনে করেন শিশু একেবারেই খেতে চাচ্ছে না তবে বিশেষজ্ঞ ডক্টর এর পরামর্শ নিতে পারেন। অনেক সময় শিশুর শরীর এ আয়রনের অভাব এর কারনে শিশু খেতে চায় না বা রুচির সমস্যা হলে খেতে চায় না। যদি আপনার শিশু একেবারেই খেতে না চায় তবে শিশু বিশেষজ্ঞ বা পুস্টিবিদ এর পরামর্শ নিবেন।
- ৫-৭ মাস বয়সী শিশুর খাবার চার্ট সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া হল । এটি একটি গাইডলাইন মাত্র । এখান থেকে আপনি আপনার ধারণা পেতে পারেন । আপনি আপনার শিশুর জন্য শ্রেষ্ঠ বিচারক। আপনার শিশুর কোনটা ভালো কোনটা খারাপ সেটা আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, তাই বিস্তারিত জানতে হলে সর্বদা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।